ঈশ্বরদী-নাটোর-সান্তাহার-পার্বতীপুর রেল লাইনের ছোট্ট স্টেশন আহসানগঞ্জ। ব্রিটিশ শাসনামলে অবশ্য স্টেশনটি পরিচিত ছিল আত্রাইঘাট নামে। আত্রাই নদী তীরবর্তী স্টেশন হওয়ায় এখনো স্টেশনটি লোকমুখে আত্রাই নামেই পরিচিত। অবশ্য পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের জমিদার আহসান উলাহ ( ১৮৭৬-১৯৩৯) এর নামে স্টেশনের নামকরণ করা হয় আহসানগঞ্জ।
আত্রাই স্টেশনটি ঐতিহ্যের দিক থেকে অনেক গুরুত্বপ‚র্ণ। কারণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম কাছারি বাড়ি পতিসরের দ‚রত্ব এখান থেকে মাত্র বারো কিলোমিটার। অনেক সময় কবিগুরু ট্রেনে করে এই স্টেশনে নেমে বোটে করে নদীপথে চলে যেতেন পতিসরে।
ইতিহাসে আত্রাইকে আরো বিখ্যাত করেছে এখানকার গান্ধী আশ্রম। স্টেশন থেকে নেমে কিছুদুর গেলেই পাওয়া যায় সুদৃশ্য সিরামিক দিয়ে তৈরী সাইনবোর্ডের উপরে লেখা “বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি; গান্ধী আশ্রম/ খাদি প্রতিষ্ঠান; তেঁতুলিয়া, আত্রাই, নওগাঁ স্থাপিত ১৯২২।” এর একপাশে মহাত্মা গান্ধী এবং অপরপাশে প্রফুল চন্দ্র রায় এবং নীচে নেতাজি সুভাষ বসুর ছবির প্রস্তর ফলক দেয়ালে লাগানো আছে।
“বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি; গান্ধী আশ্রম/খাদি প্রতিষ্ঠান” আত্রাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হবার পেছনের কারণ ছিল ১৯২২ সালের ভয়াবহ বন্যা। ১৯২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস। হঠাৎ করেই শুরু হলো বৃষ্টি। কিন্তু থামবার কোন নাম নাই। বিরামহীন সেই বৃষ্টি একটানা দশদিন ধরে চললো। উত্তরবঙ্গের সমস্ত মাঠ ঘাট তলিয়ে গেল। বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেল সেই অকাল বন্যায়। Report on Rainfall and Floods in North Bengal 1870-1922 এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা। তবে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল বৃহত্তর বগুড়া জেলার প্রায় ৪০০ বর্গমাইল এবং বৃহত্তর রাজশাহী জেলার প্রায় ১২০০ বর্গমাইল এলাকা।
অবিভক্ত ভারতের উপনিবেশিক সরকার ভেবেছিল এরকম বন্যাতো এই সকল এলাকায় প্রতিবছর হয়। এবার হয়তো একটু বেশি হয়েছে। এ কারণে তারা এদিকটায় মনোনিবেশ করেনি। জনজীবনও স্বাভাবিক রাখতে ব্রিটিশ সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। জনদুর্ভোগ ব্রিটিশ সরকার উপেক্ষা করছে এই বিষয়টি নজরে এসেছিল সংবাদপত্রের মাধ্যমে।
কোলকাতা থেকে দার্জিলিং যাবার রেলপথ ছিল এটাই। দার্জিলিং মেইল ছিল এই পথের গুরুত্বপ‚র্ণ ট্রেন। ১৯২২ সালের বন্যাকালীন সময়ে দার্জিলিং থেকে ফিরছিলেন তৎকালীন স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক সাহেব। কিন্তু ট্রেন পার্বতীপুর এসে থেমে গেল। যাবার উপায় নাই। রেল লাইনের উপর দিয়ে প্রায় দুই ফুটেরও বেশি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আরো জানা গেল আক্কেলপুর থেকে পরবর্তী কয়েক মাইল রেল লাইন বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে। ফলে দার্জিলিং মেল ট্রেনকে পার্বতীপুর জংশনে চার দিন থামিয়ে রাখা হয়েছিল। স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক বন্যার এই জনদুর্ভোগ এবং বন্যা প্লাবিত এলাকার দুঃখ দুর্দশার চিত্র নিয়ে ফিরে গেলেন কোলকাতায়। যথারীতি তা ছাপা হতে লাগলো ওই সময়ের বিখ্যাত দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায়। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়ে ১৯২২ সালের ১৫ অক্টোবরের দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় সম্পাদক লিখলেন: After a visit to the Naogaon subdivision I am on good authority to say that the damage to property and destruction of cattle is much more serious than is indicated by official estimates. The Naogaon subdivision has a population of something over five lakhs and fully sixtz thousand dwellings have been destroyed within its boundaries by the flood. … . The area affected in Rajshahi is three times the area in Bogra, and the loss to houses, property and crop is admitted to be more severe.
স্টেটসম্যান পত্রিকার পাশাপাশি অমৃতবাজার পত্রিকাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ে সিরিজ আকারে প্রতিবেদন লিখতে থাকে। উত্তরবঙ্গের বন্যার এই দুর্দশা লাঘবে ত্রাণ কাজে অংশ নিতে আসেন বাংলার বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা। এদের মধ্যে ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ। আত্রাই, সান্তাহার, হিলি এ সমস্ত এলাকায় এসে নেতারা স্বশরীরে ত্রাণ কাজে অংশ নিলেন।
বাংলার দুঃখ দুর্দশায় আরেকজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তিনি হলেন বিজ্ঞানী প্রফুল চন্দ্র রায়। ইতিপ‚র্বে খুলনায় দুর্ভিক্ষে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরিয়েছেন। কোলকাতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘বেঙ্গল রিলিফ কমিটি’। উত্তরবঙ্গের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যে তিনিও এগিয়ে আসলেন তাঁর বেঙ্গল রিলিফ কমিটিকে নিয়ে। তিনি ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটির আর একজন গুরুত্বপ‚র্ণ সদস্য ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কাজ শুরু হলো। আচার্য প্রফুল চন্দ্রের আহানে অন্তত ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রাথমিক কাজ শুরু করলেন। তাঁর আহানে বোম্বাই, মাদ্রাজ-সহ দেশের নানা প্রান্ত, এমনকি জাপান থেকেও সাহায্য এলো। আত্রাই এবং সান্তাহারে বেঙ্গল রিলিফ কমিটির শাখা অফিস খোলা হলো। বেঙ্গল রিলিফ কমিটির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত হলো কংগ্রেস কমিটি, বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস, বেঙ্গল সোশ্যাল সার্ভিস লীগ, বঙ্গীয় যুবকসঙ্গ সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন বগুড়ার যতীন্দ্রনাথ রায়, বেঙ্গল কেমিক্যাল এর সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, ডা: ইন্দ্র নারায়ণ সেনগুপ্ত, অধ্যাপক প্রফুল চন্দ্র মিত্র, বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা, অধ্যাপক নীরেন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ। বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা ১৯২২ সালের বন্যা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে ‘বাংলায় বন্যা ও তাহা নিবারণের উপায়’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ১৯২৩ সালে সরকার বন্যার কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করে এবং পিসি মহালনবীশ এর সদস্য ছিলেন।
আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায় যখন ১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গের বন্যার ত্রাণ সংগ্রহ করছিলেন গান্ধীজিও তখন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। বন্যা পীড়িতদের জন্য বোম্বের জনগণের নিকট গান্ধীজী আবেদন জানান। গান্ধীজীর সেই আবেদনে বলা হয়েছিল: “আমি আশা করি, বোম্বাই প্রদেশের লোকেরা বাংলার বন্যাপীড়িতদের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হইবে এবং ডা: পি. সি. রায়ের নিকট তাহাদের দান প্রেরণ করিবে।”
নেতাজী সুভাষ বসুও ১৯২২ সালের বন্যার কারণে সৃষ্ট দারিদ্র মোকাবেলায় স্থায়ী সমাধান খুঁজেছিলেন। তিনি এক বক্তৃতায় এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “… দারিদ্র দূর করবার উপায় কি- তাই দেখা উচিত। ১৯২২ সালে বন্যায় উত্তর বাংলা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই বিপন্ন নরনারীর সাহায্যের জন্য- তাদের দুঃখ দূর করবার জন্য সারা বাংলায় বিপুল চেষ্টা হয়েছিল। তাদেও অভাব মোচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- এই বাংলাদেশে বৎসরের পর বৎসর দুর্ভিক্ষ, বন্যা দেখা দিচ্ছে। দেশবাসী বিপন্ন হচ্ছে, কিন্তু এর প্রতিকার কী, সেই সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা দরকার। তাঁর কথার মর্ম অনেকদিন পরে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি। জাতির মধ্যে- তার কর্মে ও চিন্তায় এমন একটা নিশ্চেষ্টভাব এসেছে, যাতে আমরা কোনো সমস্যার সমাধান করতে চাই না। বন্যা কেন হয়, সেটা অনুসন্ধান না করে শুধু দুঃখ মোচন করতে অগ্রসর হলেই কাজের সমাধান হবে না। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষের সম্বন্ধেও এ কথা খাটে। প্রকৃত সেবক হতে হলে দেখতে হবে, এ দু:খের কারণ কি আর কিভাবে সেটা দূর করা যায়! যদি কারণ নির্ধারণ করতে সক্ষম না হই, তবে ফলে কিছুই লাভ করা যায় না। (তরুণের আহবান, পৃ. ৫৪)
বন্যা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা এবং এই এলাকার যুবসমাজকে কর্মসংস্থানমুখী করে তোলার জন্য আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়, নেতাজী সুভাষ বসু প্রমুখের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এর প্রতিকারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। সময়টাও ছিল অসহযোগ আন্দোলনের। ইতিপ‚র্বে ১৯০১ সাল থেকেই গান্ধীজীর সঙ্গে প্রফুল চন্দ্র রায়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়ে ওঠে। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে গান্ধীজী যখন বিদেশি কাপড় পরিহার করে দেশবাসীকে চরকায় কাটা খাদি পোশাক পরার আহান জানিয়েছিলেন। যুব সমাজকে অর্থনৈতিক ভাবে আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে চরকাকে গ্রহণ করার আহবান জানাতে থাকেন। প্রফুল চন্দ্র রায় তখন গান্ধীজীর মতকে সমর্থন করেন। ফলে তিনি চরকা ও খাদি কাপড় প্রস্তুতের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ওই সময় প্রফুল চন্দ্র হিসেব করে দেখেছিলেন বাংলার সাড়ে চার কোটি লোকের দেড় কোটি মানুষও যদি চরকা কাটেন, তবে মাসে এঁদের সামগ্রিক আয় হবে দেড় কোটি টাকা!
প্রফুল চন্দ্র রায়ের স্বদেশী ভাবনার উদ্যোগে যুক্ত হন তাঁর বেঙ্গল কেমিক্যালস লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্ত। তাঁদের উদ্যোগে আত্রাইয়ে এবং সন্নিহিত অঞ্চলগুলোতে খাদি এবং চরকার প্রচলন ঘটতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে আত্রাই (নওগাঁ) এবং তালোড়া (বগুড়া) তে এক হাজার চরকা বিতরণ করা হয়েছিল ( প্রফুল চন্দ্র রায়, আত্মকথা, পৃ. ৩৮৫)। ওই সকল চরকা থেকে প্রায় কয়েক মণ সুতা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
১৯২৫ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে গান্ধীজী বাংলা সফরে আসেন। তিনি ফরিদপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা প্রভৃতি অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের পেছনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং প্রফুল চন্দ্র রায়ের উদ্যোগ ছিল। এই সময়েই মহাত্মা গান্ধী নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রফুল চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরবর্তী পুর্ণবাসন কার্যক্রম এবং চরকা ও খাদি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পান। আত্রাইয়ের খাদি প্রতিষ্ঠান দেখে গান্ধীজী লিখেছিলেন could with my own eyes what the charkha-mad chemist had done in the relief area. ১৯২৫ সালের ২২ মে তারিখে বগুড়ার জনসভায় গান্ধীজী প্রফুল চন্দ্র রায়ের কৃতিত্ব জানিয়ে বক্তৃতায় বলেছিল It was in the fitness of things that he should think himself fortunate in visiting this district which recalled to his mind the glorious work done and being done by Dr. Ray for the poor. (অমৃতবাজার পত্রিকা, ২৪ মে ১৯২৫)। গান্ধীজী বিস্মিত হয়েছিলেন প্রফুল চন্দ্র রায় এবং তাঁর সহযোগী সতীশ চন্দ্র দাশ গুপ্ত কিভাবে দুর্গতপীড়িত আত্রাইয়ের জনগণের অভাবকে দূর করার জন্য খদ্দর এবং চরকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছিলেন। প্রায় সকল পরিবারেই গড়ে প্রতিমাসে বাড়তি আড়াই টাকা করে রোজগার হতো। এ বিষয়ে গান্ধীজি লিখেছেন, In villages near about Atrai, 90 per cent of the people were Mohammedans and in that very area Babu Satis Chandra Das Gupta had been carrying on his khaddar work under Dr. P.C. Ray, as a result of which, if the women in that area were able to earn even two and a half rupees a month, they were immensely pleased.
গান্ধীজী লক্ষ্য করেছিলেন যখন ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলিম স¤প্রীতির সমস্যা বিরাজ করছিল, তখন আত্রাইয়ের খাদি প্রতিষ্ঠান ও চরকার মাধ্যমে নওগাঁর এই এলাকার হিন্দু মুসলমানদের মধ্যকার স¤প্রীতি এবং সহমর্মিতা গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালে গান্ধীজী এটাকে দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ভারতের অনেক গুরুত্বপ‚র্ণ বক্তৃতায় তার উলেখ করেছেন। যেমন ১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাটনা ডিস্ট্রিক্ট খিলাফত কনফারেন্সে মওলানা শওকত আলী, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মোহাম্মদ আলী, জাফর আলী খান, রাজেন্দ্র প্রাসাদ প্রমুখদের সম্মুখে হিন্দু মুসলিম স¤প্রীতিতে আত্রাইয়ের বন্যা পীড়িতের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন “বন্যাপীড়িতদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ জনই ছিল মুসলমান এবং যাহারা সাহায্য কার্য করিয়াছে তাহাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৯৯ জনই ছিল হিন্দু এবং আমি নিশ্চিতরূপে বলিতে পারি যে, কোন হিন্দুই, মুসলমান ভ্রাতাদের সাহায্যের জন্য যে সময় ও শক্তি ব্যয়িত হইয়াছে, তাহাতে আপত্তি করে নাই। রাজনৈতিক প্যাক্ট ও আপোষ সফল হইতে না পারে কিন্তু এই আন্তরিক সেবা ও সহানুভ‚তির দৃঢ় ভিত্তির উপর যে বন্ধুত্ব গড়িয়া উঠে, তাহার ক্ষয় নাই।” আত্রাইয়ের খাদি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের কথা গান্ধীজী গর্বের সঙ্গে বলেছেন। ১৯২৫ সালের অক্টোবর মাসে উত্তর প্রদেশের এক রাজনৈতিক সম্মেলনে আত্রাইয়ের চরকা এবং খাদির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন। ওই বক্তৃতার বিবরণ তুলে ধরে সাপ্তাহিক ইয়ং ইন্ডিয়া লিখেছিল, “ He had just been at Atrai and seen the difference that spinning, as a supplementary occupation, had made in the condition of thousands of families. But if villagers were to be given this supplementary occupation, people must take to wearing khaddar. He further said that swaraj was not possible without the support of masses, which could not be had without village organization and the charkha was the only means of organizing villages.”
আচার্য প্রফুল চন্দ্র ও সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্তের হাতে গড়া আত্রাইয়ের খাদি প্রতিষ্ঠান ও গান্ধী আশ্রমটি আমাদের উপনিবেশিক শাসনামলের অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ সময়কালের সাক্ষী। বিদেশী নির্ভরতা ত্যাগ করে স্ব নির্ভর হবার প্রচেষ্টা এবং বন্যা পরবর্তী দুঃস্থ মানুষের বাড়তি আয়ের উদাহরণই ছিল আত্রাইয়ের খাদি প্রতিষ্ঠান। অবিভক্ত বাংলার অন্য একটি খাদি প্রতিষ্ঠান কোলকাতার সোদপুর খাদি আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয় আত্রাইয়ের অনেক পরে ১৯২৭ সালে। এই প্রতিষ্ঠানটি হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত হলেও আত্রাইয়ের আশ্রমটি অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৯২২ সালের বন্যা সংক্রান্ত রিপোর্ট, রেকর্ডস, পত্রিকার ক্লিপিংস, ১৯২৫ সালের গান্ধীজীর ভ্রমণ সংক্রান্ত গুরুত্বপ‚র্ণ ছবি ও লেখা সংগ্রহ করে এখানে রাখা হলে এটি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপ‚র্ণ সংগ্রহশালায় পরিণত হবে।
#
(প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও
সাবেক প্রোভিসি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্িত বিশ্ববিদ্যালয়।)