• Thu. Nov 21st, 2024

ঈদের সাজের সাতকাহন

অনন্য কথা ডেস্কঃ রঙ ছাড়া আমাদের প্রত্যেকের জীবন অন্ধকারে ভরা। আমরা সবকিছুকে রঙিন দেখি বলেই আমাদের মনটাও থাকে সুন্দর। প্রত্যেকটি মানুষেরই কিছু বিশেষ রঙ হয় প্রিয়। কিন্তু অনেকে আবার নিজের গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে চান পোশাক, করতে চান রুপচরচা। তা হোক না করোনাকাল। বাধা বিপত্তির মাঝেও ঠিক নিজেদের মতো করে উদযাপনের ঠিক উপায় বের করে নিতে পারে বাঙালি। ছোট থেকে বড় সব রকমের উৎসবকেই বিশেষ করে তুলতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার।
একটা রঙই যেমন আপনার চেহারা এবং সমগ্র লুকটাকে ডুবিয়ে দিতে পারে তেমন একটি রঙেই ফুটে উঠতে পারে আপনার ব্যক্তিত্ব। আপনার রুচিশীলতার পরিচয় দেয় এই রঙ। তাই নিজের জন্যে সঠিক পোশাকের রঙ বাছাটা খুবই দরকার। আপনার আন্ডারটোন নির্ধারণ করবেন কীভাবে?
আপনার ত্বকের উপরের অংশ যতই কালো বা ফর্সা হোক না কেন ত্বকের আন্ডারটোনটি হয় শীতল বা উষ্ণ প্রকৃতির আর তা না হলে নিরপেক্ষ হবে। কব্জির কাছের শিরাগুলি লক্ষ্য করুন। ত্বক যদি খুব হালকা হয় এবং আপনি আপনার শিরাগুলি দেখতে পান তাহলে আপনার ত্বকের নীচে সেগুলি নীল বা সবুজ কোনটি তা দেখুন। যদি প্রথমেরটা হয়, তাহলে বুঝবেন যে আপনার কুল আন্ডারটোন রয়েছে, আর যদি পরেরটি হয়, তাহলে আপনার আন্ডারটোন ওয়ার্ম। শীতল আন্ডারটোনযুক্ত লোকেদের ত্বক উষ্ণ আন্ডারটোনযুক্ত ব্যক্তিদের ত্বকের চেয়ে খুব সহজে সানবার্ন হয়ে যায়।
কুল আন্ডারটোন হলে উজ্জ্বল নীল, পার্পেল, সবুজ, হলুদ রঙ মানাবে ভালো। ওয়ার্ম আন্ডারটোন হলে কমলা, হলুদ, হালকা তামাটে এবং অফ হোয়াইট মানাবে ভালো। নিউট্রাল আন্ডারটোন হলে লাল, টিল কালার, ডার্ক পার্পেল এই রঙগুলি মানাবে ভালো আপনাকে। এই রঙগুলিকে মাথায় রেখে কিনে নিন পোশাক।
এই ঈদে গ্রীষ্মের দাবদাহের কথা মাথায় রেখে নারী ফ্যাশনের সঙ্গে কমফর্টও গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কেমন পোশাকে স্পটলাইট ও আরাম উভয়েই থাকা যাবে।
১) শাড়ি- বাঙালির ঈদ শাড়ি ছাড়া অকল্পনীয়। তবে গরমের কথা মাথায় রেখে ভারী শাড়ি এড়িয়ে যান। একরঙা খাদির শাড়ি, হ্যান্ডলুম শাড়ি পরতে পারেন। স্লিভলেস, হল্টার নেক, বোট নেক, নুডল স্ট্র্যাপ, রেসার ব্যাক ব্লাউজ পরতে পারেন অনায়াসে। ২) কাফতানঃ ফ্যাশন জগতে কাফতানের গুরুত্ব বেড়েছে করোনার কবলে পড়া সময়ে। আবার গরম এসেছে। করোনার আতঙ্কও ঘরে থাকার সময়টা ফের বাড়ছে। সব মিলে আবারও ফিরেছে কাফতানের সময়। তবে শুধু ঘরে আর নয়। এই গ্রাষ্মে তেমন একটা পোশাকে সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে মন্দ কী? আলমারিতে একটা ডিজাইনার কাফতান থাকলে নানা ভাবে সেজে ফেলা যায় এই মরসুমে।
৩) ফ্লোরাল প্রিন্ট- গরমে চোখের আরাম দিতেও ফ্লোরাল প্রিন্টের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে হালকা গোলাপি, পাউডার বল্টু, হলুদ, মিন্ট গ্রিন এই রঙের উপর ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক নববর্ষে পরতে পারেন। ফ্লোরাল প্রিন্টের মিড লেনথ ড্রেস পরলে নজর কাড়বেন সহজেই। সঙ্গে পরে নিন আরামদায়ক ফ্লিপফ্লপ জুতো।
৪) জাম্পস্যুট- বেশ কয়েক বছর ধরেই ফ্যাশনে ইন এই পোশাক। চলাফেরা করার জন্যও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। তবে অন্য কোনও ফ্যাবরিক নয়। এবারে ঈদের জন্য বেছে নিতে পারেন সূতির বা অথবা ইক্কতের জাম্পস্যুট। লুকটিকে সম্পূর্ণ করতে মেসি বান ও একটি স্লিং ব্যাগই যথেষ্ট। সাজে নাটকীয়তা যোগ করতে পরে নিন কানে বড় হুপস।
৫) ওয়াইড লেগ ট্রাউজার- স্কিনি বা ফিটেড জিন্স থাকলে এই গরমে সেগুলিকে ওয়াড্রোবেই রেখে দিন। তার বদলে ওয়াইড লেগড হাই ওয়েস্ট ট্রাউজার পরুন। ফ্যাশনে ফিরে এসেছে বুটকাটও। অথবা পালাজো বা প্যারালাল প্যান্ট পরতে পারেন। টপ পরুন উজ্জ্বল রঙের।
৬) ওয়ান পিস ড্রেস- ম্যাক্সি ড্রেস, অ্যাঙ্কল লেনথ মা মিডি ড্রেস সবকটিই এখন ফ্যাশনে ইন কারণ ফ্যাশনের সঙ্গে আরামেও থাকা যায়। বিশেষ করে সূতি, খাদি বা ইক্কতের পোশাক পরুন। উজ্জ্বল রঙের ইক্কতের পোশাক এখন ফ্যাশনে ইন। সঙ্গে জাঙ্ক গয়না পরুন।
৭) কো-অর্ডস- টু-পিস পোশাক বা কো-অর্ডস এই মুহূর্তে ফ্যাশন দুনিয়ায় নজর কাড়া পোশাক। টোনড মিডরিফ হলে অনায়াসে পরতে পারেন ক্রপ টপের সঙ্গে স্কার্ট অথবা প্যারালাল। তা না হলে প্যান্টস্যুট অথবা কুর্তির সঙ্গে লেগিংস না পরে পরতে পারেন ট্রাউজার।
পোশাকের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মেক আপ। এসময়ে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় মেকআপ গলে যায় খুব সহজেই।
প্রতিদিনের জন্য কিভাবে বেস মেকআপ করলে তা সহজে গলবে না, তা জেনে নিন
১) প্রথমে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না একটু চিনি আর পানি মিশিয়া নিন তারপর সারা মুখে ভালোভাবে সেই স্ক্রাবটি লাগিয়ে নিন। ঠোটও বাদ দেবেন না। কারন, ঠোটেও ডেড সেল বা মৃতকোষের সৃষ্টি হয়। ২) মুখে একটু মশ্চেরাইজার ক্রিম লাগিয়ে নিন যদি আপনার ত্বক রুক্ষ হয়। তৈলাক্ত ত্বক হলে অয়েল ফ্রি ক্রিম লাগান। এবার মুখে প্রাইমার মাখুন। মনে রাখবেন, মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করার মূল কাজটাই করে প্রাইমার। অল্প একটু প্রাইমার নিয়ে পুরো মুখে ম্যাসাজ করে নিন। তৈলাক্ত এলাকা বা দাগযুক্ত এলাকাগুলোতে একটু বেশি করে প্রাইমার লাগান। ৩) ম্যাট জাতীয় ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। মুখে ভালো করে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে একটু পানি ছিটিয়ে নিন অপেক্ষা করুন এক মিনিট এরপর টিস্যু দিয়ে হাল্কা করে মুছে নিন।৪) সবশেষে, ফেস পাউডার গায়ের রঙের সাথে মিলিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। চিকচিকে ভাব আনার জন্য শিমার পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
গরমে ফ্রেশ লুক রাখতে চোখের মেক আপ হালকা রাখুন। গাঢ় কাজলের বদলে চোখের উপরের লিডে পরুন আই লাইনার। ঠোঁটে গোলাপি ও পিচের ন্যুড শেড পরুন। গালে হালকা ব্লাশ অবশ্যই লাগান।
কিছু বিশেষ ধরণের মেকআপ আমাদের মেয়েদের জন্যে এই সময়ে খুবই উপকারী ও দেখতেও দারুন লাগে। তবে সব কিছুর সঙ্গে মাস্ক পরতে ভুলবেন না। চলুন দেখে নিনঃ
১. ঈদের পরে কোনো বড়ো অনুষ্ঠান বা বিশেষ ইভেনন্ট পার্টিতে গেলে রাতের দিকে প্রেফার করুন একটু বোল্ড মেকআপ। বিশেষ অনুষ্ঠানেই এমন সাজ মানায়। তবে দিনের আলোয় এমন সাজতে চাইলে সূর্যের তাপ থেকে মেকআপকে গলে যাওয়া থেকে বাঁচাতে অবশ্যই ভালো মেকআপ প্রাইমার ও ফিক্সার রাখুন সংগ্রহে।
২. একটু চকচকে ফাউন্ডেশন, সিলভার হাইলাইটার দিয়ে সাজতে পারেন। এবার গালে আর মুখে একটু বুলিয়ে নিন পিঙ্ক শ্যাডো। এতে গোটা মুখে একটা উজ্জ্বল গোলাপি আভা আসবে। আপনার মুখের নিজস্ব সৌন্দর্য বজায় থাকবে। অথচ আপনি যে মেকআপ করেছেন সেটাও কেউ বুঝতে পারবে না।৩. একগাদা মেকআপ ব্যবহার না করে শুধুই কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার মুখের ছোপগুলি ঢেকে যাবে। এটাকে ভালো করে মেশান। গালের কাছের হাড়টিতে হাইলাইটার দিতে ভুলবেন না। একটু ব্লাশও লাগাবেন।
৪. গ্রীষ্মকালের জন্যে আদর্শ হলো ম্যাট লিপস্টিক। হালকা সাজে টকটকে লাল লিপস্টিক লাগান ঠোঁটে। সঙ্গে গোল্ডেন হাইলাইটার লাগান ঠোঁটে। সঙ্গে গোল্ডেন হাইলাইটার ও ব্লাশ লাগান। তবে আইশ্যাডো দেবেন গোল্ডেন। চোখের সাজে বেশি কিছু দেবেন না। ঠোঁটটিকেই ফুটিয়ে তুলবেন বেশি করে।
নাকফুল বা নোসপিন বা নোলক মান্ধাতার এই চল এখন বেশ মডার্ন সাজে ধরা দিচ্ছে নানা রূপে। দেখুন আর নিজের জন্য বেছে নিনঃ
১. ফ্লাওয়ার স্টাইল স্টোন বসানো নোলক: এক্ষেত্রে একটি বড়ো নথের মধ্যে একটি ফুলের আকারে ছোট মতো পাথর বসানো থাকে। সেটাই হবে এই নথের আকর্ষণ। নথটি বড়ো হলেও একেবারে যে ঠোঁট পেরিয়ে যাবে তেমনটাও নয়।
২. হেভি নক্সার নোলক: পড়েই বুঝতে পারছেন যে এর ডিজাইনে থাকবে একাধিক রঙিন পাথর। বেশ ভারী হবে নোলকটি ওজনেও। আপনার ব্রাইডাল লুক একটু হালকা করতে হবে যাতে মুখের মধ্যে নথটি ফুটে ওঠে। তার ফাঁক দিয়ে আপনার এক চিলতে মিষ্টি হাসিই হবু বরের মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নেবে।
৩. মারাঠি স্টাইল নোলক: আজকাল এর চাহিদা তুঙ্গে। বাঙালি ও অবাঙালি সবাই এই ধরণের অন্যরকম নোলকে সাজাতে চাইছে নিজেকে। খুব বড়ো হয় না এগুলি। আবার খুব ছোটও নয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্যে পরতে খুব অসুবিধে হয় না। গোটা নথটা জুড়েই থাকে ভারী কাজ। যে কোনো লুকে মানাবে আপনাকে। যে কোন উৎসবে বাঙ্গালী নারীদের শাড়ি আর সাথে চুলের খোঁপা। সেই সাথে খোঁপায় ফুল দিয়ে আকর্ষনীয় করে তুলতে পারেন আপনার সৌন্দর্য্যকে।
ছেলেদের জন্য ঈদুল ফিতরের এবারের আয়োজনে থাকছে পাঞ্জাবি, কাবলি সেট, সিঙ্গেল পিস কাবলি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, টি শার্ট, পোলো শার্ট, ফতুয়া, কাতুয়া, ডেনিম প্যান্ট, চিনো প্যান্ট, কার্গো প্যান্ট, পায়জামা ইত্যাদি।
এছাড়াও ছেলে শিশুদের জন্য থাকছে শর্ট স্লীভ এবং ফুল স্লীভের শার্ট বা ফতুয়া। লং প্যান্টের পাশাপাশি রয়েছে কোয়ার্টার প্যান্ট। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি ভাইব্রেন্ট কালারেরও পাঞ্জাবী থাকছে। মেয়ে শিশুদের জন্য থাকছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, থ্রি পিস, জাম্প সুট, ফ্যাশন টপস, নীমা সেট, টপ বটম সেট। ছেলে শিশুদের জন্য আরও থাকছে পাঞ্জাবি, কাতুয়া, লং ও শর্ট স্লীভ শার্ট, পলো টি-শার্ট, ফ্যাশনেবল শার্ট-প্যান্ট সেট, বয়েজ কার্গো ইত্যাদি।
পুরুষদের গয়নাঃ পুরুষদের সাজের আনুষঙ্গিক হিসাবে আর যা-ই হোক, কোনও গয়নার কথা ঝট করে ভাবা হত না আগে। কিন্তু সময় বদলেছে। বদলেছে রুচি। এখন প্রায় সব গয়না বিপণি আলাদা করে পুরুষদের জন্য আনে নিত্য নতুন ডিজাইন। আর গয়না পরার চলও বেড়েছে ছেলেদের মধ্যে। কানের দুল, গলার চেন, হাতের বালা, আংটি, রিস্টলেট। কোন পুরুষের পছন্দ কেমন, তা বোঝার মাপকাঠি হয়ে উঠেছে এমন কিছু গয়না।
হিরের স্টাড
কানের দিকে তাকালেই হাল্কা ঝিলিক। অফিসের পোশাক হোক কিংবা বিয়ে বাড়িতে। সবের সঙ্গেই নজর কাড়ে হিরে বসানো একটা ছোট্ট কানের দুল। এক কানে। কেউ কেউ পছন্দ করেন দু’কানে পরতে। তবে কোনটা মানাবে বেশি, তা নির্ভর করে পোশাকের পছন্দ এবং ব্যক্তিত্বের উপরেই।
প্ল্যাটিনাম চেন
কানের স্টাড তুলনায় কম পুরুষকে মানায়। তবে একটা প্ল্যাটিনাম চেন পরার মতো ব্যক্তিত্ব অনেকেরই হয়। এই গয়নার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পোশাকও মানায়। গোল গলা সাধারণ টি-শার্ট থেকে ঝলমলে ডিজাইনার জ্যাকেট, সবের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম এমন চেন।
হিরের রিস্টলেট
অনেককেই হয়তো হাতে চেন পরতে দেখেছেন। চামড়া কিংবা কাঠের কাজ করা রিস্টলেট বহু পুরুষের হাতেই দেখা যায়। তবে প্ল্যাটিনাম বা সাদা রঙের সোনার উপরে কয়েকটা হিরে বসানো গয়নাটির মেজাজ একেবারেই আলাদা।
ভালবাসার প্রিয় পুরুষকে নতুন রূপে দেখতে এমন একটি উপহার দিয়ে সযত্নে সাজিয়ে তোলাই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *