• Thu. Nov 21st, 2024

গণমাধ্যম , সংবাদ কর্মী ও শ্রম মূল্য
—–নরেশ মধু

বাইরে প্রবল বৃষ্টি। সাথে দমকা হাওয়া। ইদানিং মানুষ যেমন তার বৈশিষ্ঠ্যেরও পরিবর্তন করেছে ঠিক তেমনি প্রকৃতিও তার ঋতুর বৈশিষ্ঠ্য মেনে চলছে না। এর জন্য কাকে দায়ী করা যায় সে সব প্রশ্ন থাক। বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে প্রেসক্লাবের সিড়ি ভেঙ্গে উপড়ে উঠি। পাবনা প্রেস ক্লাব। বন্ধু কামাল, সাদী এতক্ষণ অপেক্ষায় ছিল। ক্লাবে ঢুকতেই আনন্দ চিৎকার। কারন ১ লা মে পাবনা প্রেস ক্লাবের ৫৬ তম প্রতিষ্ঠিা বার্ষিকী। যেহেতু ১ লা শ্রম দিবস তাই আমরা ২ মে প্রেস প্রতিষ্ঠা বাষির্কী পালন করে আসছি। বৃষ্টিতে কিছু করার নেই তার পাশের রুমে বসে ফেসবুক খুলে যোগাযোগ করছি। হঠাৎ নজড়ে এল মিঠুন মিয়ার একটি লেখা। মিঠুন মিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভগের প্রভাষক। লেখাটা পড়ে বেশ ভাল লাগল। তিনি বলেছেন গণমাধ্যম দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। আইন বিচার ও শাসন বিভাগের মত একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি তিনি ঠিকই বলেছেন। এবং তার সাথে আমি সহমত পোষণ করে কথা বলতে চাই। বাংলাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশনার একটি নিয়ম নীতি আছে। কি কি যোগ্যতা বা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারেন সেটি নিশ্চয়ই অছে। এবং জেলা পর্যায়ের সংবাদপত্র প্রকাশের ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। এবং স্বাধীনতাকে অবলম্বন করেই জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে সংবাদপত্র প্রকাশনায় মুক্তবুদ্ধিও চর্চ্চা করি। একসময় সংবাদপত্র ছিল জনগনের মুখপত্র । এখন কিন্তু তা নয়। এখন পত্রিকা প্রকাশনায় বিবেচনা করা হয় তিনি কোন রাজনৈতিক দলে বিশ্বাসী এবং কতটুকু তিনি তার পক্ষের হয়ে কাজ করবেন। মিঠুন রাস্ট্রের তিনিটি বিভাগের কথা উল্লেখ করেছেন সেখানকার জনশক্তি নিয়োগের একটি নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু একমাত্র সাংবাদিকতা যেখানে কোন মানদন্ড ছাড়াই কাজ করা সম্ভব। নূন্যতম নীতি বোধের তোয়াক্কা না করেই যে কেউ পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেন এবং সাবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিকের সংখ্যায় প্রতি জেলায়, উপজেলাগুলোকে বাদ দিয়েই প্রায় শ’খানেক সংবাদ কর্মী কাজ করেন। এবং এই বিশাল জনশক্তির শিক্ষা , দক্ষতা,অভিজ্ঞতায় সমন্বয়হীনতা চোখে বাধে। ইদানিং অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে কুন্ঠা বোধ করেন। এর জন্য দায়ীকে ? সরকার, দল, শিল্পপতি না কি বিশেষ কোন গোষ্ঠী। যে কেউ একটি পত্রিকা প্রকাশ করে একটি প্রেস কার্ড হাতে ধরিয়ে সাংবাদিক বানিয়ে দেন। এবং ঠিক কিছু কিছু প্রাশসনের মত মাসিক হারে একটি মোটা অংক ঢাকায় পাঠাতে হয়। আবার কেউ কেউ সংবাদকর্মী থেকে বিজ্ঞাপন কর্মী, বাজার ব্যবস্থাপকের শর্ত জুড়ে দেন।কত কপি পত্রিকা চালাতে পারবেন , কতটাকার বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন ইত্যদি শর্ত জুড়ে দিয়ে এবং সেই শর্তাদি আপনি মেনে নেন তবেই আপনি সাংবাদিক পরিচয় পত্র পাবেন এবং জেলা বা উপজেলা শহরে ঐ তিন স্তম্ভের উপড়ে ছড়ি ঘোরাতে পারবেন।
অপরদিকে যেকোন নিয়োগে শর্ত থাকে। কাউকে চাকুরীচ্যুত করতে হলে নুন্যতম একটি নীতিমালা মেনেই করা হয়। সংবাদ মাধ্যমে সেটির বালাই একবারেই নেই। আমি গত রোজায় ঢাকার একটি পাক্ষিক পত্রিকায় যোগদান করি। যোগদান পত্রে উল্লেখ ছিল তিনমাস আমার প্রভিশনাল পিরিয়ড। এবং আমার যোগ্যতা যাচাই করে চাকুরী সময়সীমা বাড়াবেন। অথচ আমার যাগ্যতা যাচাই না করেই মাত্র পনের দিনের মাথায় সম্পাদক তার টেবিলে ডেকে নিয়ে তাৎক্ষণিক বেতন দিয়ে বিদায় দিলেন। অবশ্য তিনি পনের দিনের বেতন দিতে চাইছিলেন। তিনি যখন বেতন দেন তখন চলতি মাসের ৭ দিন । তিনি চলতি মাসের কোন বেতনই দিলেন না। আমি তাকে লিখেছিলাম চলতি মাসের বেতন দেবার জন্য। তিনি বেতন না দিয়েই কোন নোটিশ বা কারন দর্শানো ছাড়াই আমার বিদায়।
অপরদিকে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সূচনা মফস্বল সাংবাদিকতার মাধ্যমে এটা ঠিক। অথচ আজও আমাদের মফস্বল সাংবাদিকতা অবহেলিত। অথচ সেই মফস্বলে সংবাদ ব্যতীত সংবাদপত্রের পাতা ভরে না। জেলা ও থানা পর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রথমদিকে শখের বশে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যারা ভালোবেসে ফেলেন তারা নেশায় আসক্ত হয়ে যান। নেশার মোহে জীবনের অন্য পেশার বয়স ও সুযোগ থেকে দূরে সরে যান। সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ থাকে না। যখন পেশা হিসেবে নেয়া হয় তখন একজন মফস্বল সাংবাদিক হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন কতটা যন্ত্রণা এ পেশায়। এ পেশার লোকদের সমাজে সম্মান আছে, প্রশাসন সমীহ করে। সেই সকল সাংবাদিকদের এটি অন্য দিকও আছে। তবে সকলের জন্য নয়। সকল পেশায় ভাল মন্দু দু’টো দিকই থাকে এটা সত্যি। কোন অফিসের একজন পিয়ন পদে চাকুরির আবেদন করতে হলে প্রথমেই কিছু শর্ত মেনেই আবেদন করতে হয়। অথচ এই পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন মানদন্ড নেই।
সরকারের প্রথমেই উচিত অন্য তিনটি স্তম্বের মত জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম নীতি তৈরী করা দরকার। সাথে সাথে নৈতিকতার বিষয়টি অন্যান্য পেশার চেয়েও এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ । অথচ সেদিক একেবারে উপেক্ষিত।
অবশ্য এর জন্য দায়ি সংবাদ পত্রের মালিক পক্ষরা। যদি নিয়মিত বেতন দিতেন তা হলে নিশ্চয়ই অন্যান্য পেশার মত এ পেশায়ও আরও দেশ প্রেমিক দক্ষ লোকবল কাজ করতেন। তখন হয়তা মফস্বল সাংবাদিকদের অপবাদ কিছুটা কমত। অবশ্য এর জন্য কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকগন দায়ী নন। এর নেপথ্যে দায়ী গণমাধ্যম। মফস্বল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা নানা ধরনের দুনীর্তি এবং অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করেন। কারণ গণমাধ্যম মালিকরা সঠিকভাবে তাদের নিয়োগ দিচ্ছেন না এবং কাজের পারিশ্রমিক ও দিচ্ছেন না। ঢাকার অনেক পত্রিকা ভূয়া ওয়েজ বোর্ডের তথ্য দিয়ে ডিএফপিতে দাখিল করেন। অনেক নেতা যারা ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের জন্য মাঠে লড়াই করেন তাদের নিজেদের পত্রিকাতে কোন ওয়েজ বোর্ড দেয়া হয় না। একটু ভাবুন যে নিজের পত্রিকাতে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেন না অথচ ঢাকার রাজপথে মিছিল করেন ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের জন্য সেই দেশে মফস্বল সাংবাদিকদের নিয়ে ভাবনায় জায়গা কোথায় ?
গণমাধ্যম দেশের যে কোন ক্রান্তিকালে জনগনের পাশে দাড়িয়েছে দেশের পাশে দাড়িয়েছে । সতরাং সরকারকে গণতন্ত্রকে জনবন্ধব করা, দেশের জঙ্গীবাদকে উৎখাত করা দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন, অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়, সমস্যা , উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে এখনই প্রয়োজন , সংবাদপত্র প্রকাশনার নীতিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সহ সংবাদকর্মী নিয়োগ নীতিমালা প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন করা।
নরেশ মধু
সাংবাদিক ও উন্নয়ন শ্রমিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *