• Thu. Nov 21st, 2024

চক্ষুর প্রকারভেদ (মোঃ রফিক আলী রউফ)

নয়নে নয়ন হরে দেখিলে পরান ভরে। আমল সাধনার ঘরে উদয় নয়ন হবে যারে। জ্ঞান নয়ন খোলাসা করে রাখে যে সদয় ভরে। দিব্য নয়নে দেখিবে তারে, মন নয়নে পরানও ভরে।
মানুষের কয়েক প্রকার চক্ষু (নয়ন) আছে। তার মধ্যে প্রধান চার প্রকার যা সহজ থেকে সহজতর করে। আর চক্ষুগুলি হলো চর্মচক্ষু, অন্তর চক্ষু, জ্ঞানচক্ষু ও আমলের চক্ষু। যার কাছে যে রূপ উদয় নয়ন, তার কাছে সেরূপ হয়েছে চক্ষের সংযোজন। চর্মচক্ষুর কাজ হলো সমস্ত বস্তুসমূহকে দেখা, জ্ঞানচক্ষুর কাজ হলো দেখা বস্তুসমূহকে স্মরণে রাখা, স্মরণ হলো খেয়াল, খেয়াল না হলে দেখা বস্তুও দেখা যায় না। অন্তরের চক্ষু হলো অন্তরের পর্দা। যা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা বস্তুসমুহকে ধরে রাখার জন্য। আমলের চক্ষু হলো দেখা নাগালের বস্তুসমূহকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে মালুম করা, আর নাগালের বাইরে যা দেখা, তা সাধনায় রাখা।
১। চর্মচক্ষুর কাজ হলো সম্মুখ বস্তুসমূহকে দেখা, আর দেখা শেষ হলে সম্মুখ বস্তু চক্ষের সামনে না থাকলে তখন চর্ম চোখে আর কিছুই দেখেনা বা দেখা বস্তুসমুহকে পরে আর দেখাইতেও পারেনা। মোট কথা লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে চর্মচক্ষে শুধু দেখাই যায়, দেখা বস্তু ধরে রাখা যায় না, জ্ঞানে রাখা যায় না, আমলে রাখা যায় না। যেমন জ্ঞান হারা বা ঘুমন্ত ব্যক্তির চর্মচক্ষের সামনে কোন বস্তুসমূহ রাখা হলে সে কি দেখতে পারে? না পারে না, কারণ তার মন জ্ঞান সব অচেতন। তাহলে আমাদেরকে মানতে হবে চর্মচক্ষুই চক্ষু নয় আরো চক্ষু আছে, আর এটাই সত্য।
২। জ্ঞানচক্ষুর কাজ হলো চর্মচক্ষের দেখা বস্তুসমূহকে জ্ঞান নয়নে (চক্ষে) স্মরণে রাখা, স্মরণ হলো খেয়াল. খেয়াল না থাকার কারণ যখন আপনি দেখা বস্তুসমূহকে স্মরণ করবেন তখনই সে বস্তু দেখতে পাবেন এতে সন্দেহ নাই। না হলে চর্মচক্ষের দেখা বস্তুসমূহকে দেখা যায়না। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে স্মরণের চক্ষু থেকেই জ্ঞানচক্ষুর উদয়, আরো লক্ষ্যণীয় এই যে শ্রবণ শক্তি চক্ষু থেকেই স্মরণ চক্ষুর উদয় কেননা আপনি যখন কোন গল্পকথা শ্রবণ করেন, তখন ঐ গল্পকথার মধ্যে যে বস্তু আছে তা অবশ্যই দেখেন, অস্বীকার করার কায়দা নাই। আর শ্রবণচক্ষু কোথায় থাকে? কর্ণে থাকে তাহা হইলে কর্ণও একটি চক্ষু। চর্মচক্ষুর দেখা বস্তুসমুহকে জ্ঞানচক্ষে পৌঁছাতে গেলে শ্রবণচক্ষু, স্মরণচক্ষু ভেদ করতে হবে। এখানে বাড়তি দুই চক্ষের কথা এইজন্য বলা হলো, যে না বললে পাঠকের পড়ে বুঝা কঠিন হতো। আর জ্ঞানচক্ষু এমনিই একটি চক্ষু যা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ, নিকট থেকে দূরে, জমিন থেকে আসমানে বা সারা বিশ্ব জাহানের সমস্ত বস্তুসমূহকে দেখা যায় যদি সমস্ত চক্ষু পরিস্ফুটিত হয়। লক্ষ্য করুন যা আপনার জ্ঞানে ছিলো না তা জ্ঞান আসার পরে আপনি কি দেখতে পারেন? অবশ্যই দেখতে পান, তাহলে অজানা, অদেখা বস্তু যখন জ্ঞানবানরা বলে দেন বা দেখিয়ে দেন তখন অবশ্যই আপনার কাছে দেখা হয়ে যায়। এমনি মতে যার যার জ্ঞান ভান্ডারের জ্ঞান থেকেই জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে, তখন অজানা অচেনা বস্তুসমূহকে আপন আপন জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দেখতে থাকেন। আর জ্ঞানহীন ব্যক্তিরাই জ্ঞান পেয়ে জ্ঞানবান হন, তখন অজ্ঞানতার মধ্যেই জ্ঞানচক্ষু ফুটে ওঠে, তা দিয়ে আপনি সব দেখতে পান এটাই সত্য। আরও লক্ষ্য করুন আপনি নতুন করে কোন নির্মাণ কাজ করতে যাওয়ার আগে যখন ঐ কাজের নির্বাচনের চিন্তা করেন তখন আপনি আপনার জ্ঞানচক্ষু দ্বারা বিচরণের মধ্যে নির্মাণ বস্তুসমূহ দেখে থাকেন। যখন বাড়ি, বিল্ডিং, কেমন বাড়ি, কেমন ঘর বা কেমন বিল্ডিং তৈয়ার করার পূর্বে আপনি যেরূপ তৈয়ার করবেন সেরূপ যদি চিন্তা করেন তাহলে নির্মাণ সামগ্রী আনার পূর্বেই বা বাড়ি বিল্ডিং তৈয়ার করেন তা বিল্ডিং তৈয়ার করার পূর্বেই আপনি জ্ঞানচক্ষে দেখতে পাবেন এটাই সঠিক। আর আল­াহ আয়াত কুরানে বলেন মানকানা ফি হাফেজি হি। অর্থঃ যারা দুনিয়াতে অন্ধ থাকবে, আখেরাতে তারা অন্ধ হয়ে উঠিবে। আর এটাই হলো জ্ঞান অন্ধ। কারণ আল­াহ চক্ষু দিয়ার পরেও যদি অন্ধ থাকে, তাহা হলে তাকে অন্ধ হয়ে উঠতে হবে, আয়েতের তাফছিরে এটাই আল­াহ বুঝাইতেছে।
লেখক: কবি ও চিন্তাবীদ, পাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *