• Thu. Nov 21st, 2024

জন্ম নিবন্ধন প্রেক্ষাপটে পরিপূর্ণ নামের তাৎপর্য (মুনশী আবু ইউছুফ নয়ন)

মানুষের মায়া মমতায় পরিব্যাপ্ত সংসারে নব-জাতকের মুখ নিঃসৃত প্রথম কান্নার চিৎকার বা ধ্বনিকে প্রাজ্ঞজনেরা সাহিত্যের উন্মেষ অভিহিত করেন। অপর দিকে মদ্যজাত সন্তানের বাবা-মায়ের মনোজগতে পরম প্রাপ্তির যে আবেগ অনুভূতি দেখা দেয় তার উপমা কোন কিছুতে মেলেনা! চিরন্তন বাঙালি পরিবারে নতুন অতিথি শিশুকে ঘিরে মায়াময় নিবিড়তায় স্বজনদের আনন্দানুভূতিতে বহুমাত্রিক নাম সম্বোধনের উচ্ছাস প্রকাশ পায়। শিশুর অভিভাবকগণ স্নেহ-আদরের বশবর্তী হয়ে যে নামেই উচ্চারণ করুক সময়ানুযায়ী যথারীতি অর্থবহ পূর্ণ নাম করনে কার্পন্য করেনা। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ যথেষ্ট, আদরের নাম দুখু মিয়া যথার্থ নাম কাজী নজরুল ইসলাম সরলার্থÑ শান্তির চোখ।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বহু ভাষার সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ হওয়ার ফলশ্র“তিতে পরিবারের সদস্যদের নামকরণে ভিন্নার্থ স্বর্ধমীয় প্রভাব থাকলেও সমকালীন প্রগতি শীল চেতনায় এই প্রজেন্মর নামকরণে অসা¤প্রদায়িক মানসিকতার স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়। এই সুবাদে প্রত্যাশা করি, বাঙালির এই মৌলিকত্বকে অভিভাবক মন্ডলী সার্বজনীন বিকাশমান সংস্কৃতির কাঙ্খিত পর্যায়ে উপনীত করবেন। যা হোক প্রাসঙ্গিকতায় বলতে হয়, এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ সময়কালে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে স্বনামধন্য-বরেণ্য ব্যাক্তিগণ তাঁদের পরিপূর্ণ নাম অর্থাৎ নিজস্ব পূর্ণ নাম সদ্ব্যাবহারে মহিমান্বিত। কিন্তু ব্যাতিক্রম তৎকালীন রাজনৈতিক কিছু সংখ্যক পরাশ্রয়ী নেতা ও তথাকথিত সমাজপতি যারা ব্রিটিশ প্রভাবিত ও খেতাবধারী হীনমন্যতায় সংক্ষিপ্ত নামকরণের সাথে ন্যাক্কারজনকভাবে নামের আদ্যাক্ষরে ইংরেজীর বাংলা লেবাস দিয়ে জাতে উঠার অপপ্রয়াশ করেছে। অপ্রিয় হলেও সত্যি স্বাধীন বাংলাদেশে অনুরূপ সামন্ত প্রভুর তল্পিবাহকতায় ইংরেজী ও বাংলা সংমিশ্রণে জগাখিচুরি নাম করণ বহাল আছে ! এমন গ্লানিকর পরিস্থীতিতে এই প্রজন্ম মাতৃভাষা বাংলায় নিজ নাম পরিপূর্ণ সদ্ব্যাবহারে  বিভ্রান্ত ব্যার্থতার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় বরণীয় ব্যাক্তিত্বদের পূর্ণ নাম জানা থেকে বঞ্চিত ! এমন দূভার্গ্যজনক তথ্যের স্বচ্ছতায় অসংখ্য নামের মধ্যে কতিপয়ের নাম উলে­খ না করলেই নয়। অন্যতম জাতীয় নেতা এ, কে, এম, ফজলুল হক, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এ, জি, ওসমানি সেকটর কমান্ডার সি. আর. দত্ত, কে. এম. শফিউল­াহ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ, কে, খোন্দকার প্রমুখ।
আমার জানা মতে সারা বিশ্বে মানব জাতি, গোষ্ঠীতে শিশুর নামকরণে ধর্মীয় স্বকীয়তায় পরিপূর্ণ নামকরণ করা হয়। তদপ্রেক্ষীতে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের পূর্ণ নামকরণ জন্ম নিবন্ধন ব্যাবহারিক জীবনে তার পূর্ণ সদ্ব্যাবহারে পরবর্তী সময়েও সেটি বজায় থাকবে। বিশেষ ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত নামের প্রয়োজনীয়তায় অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাংলা আদ্যাক্ষর শোভন সুন্দর ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সুশীল সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালনের সাথে লক্ষ্য রাখতে  হবে, ইচ্ছাকৃত কেউ নামের ব্যাবচ্ছেদ ঘটিয়ে বিদেশী ভাষা অক্ষরে বাংলা লেবাস পরানোর ঘৃণিত কর্মের অবকাশ না পায় ! আজ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক মর্যাদায় সমাসীন। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মদের কাছে বাংলাদেশী বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমুন্নত রাখার পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলায় পরিপূর্ণ নাম সংরক্ষণ ও প্রয়োগে পূর্ণ সদিচ্ছা আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। এই আত্মপ্রত্যয়ের দীপ্ত শপথে জন্ম নিবন্ধন সর্বাঙ্গীন সার্থক ও সুন্দর হোক।

দুই

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথমভাগে কলকাতা জনবহুল এলাকা ধর্মতলায় এসে জয়বাংলা শরনার্থীদের পক্ষে জনমত তৈরীতে উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজনে সমাগতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকায় আমি, হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও দোসর রাজাকার আলবদরদের নৃশংস অত্যাচারের বর্ণনায় জয়বাংলার বাঙালিদের বাঁচাতে মানবিক চেতনায় সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতার উদাত্ত আহবানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখি। 
স্বাধীনোত্তর কলম সৈনিক সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনে খোকসা প্রেসক্লাব, খোকসা সাধারণ সম্পাদক পদে থাকাকালীন বিজয় দিবস উপলক্ষে ছোট আকারে স্মরণিকা বের করা হয়। গুণীজনদের রচনায় সেই স্মরণিকায় আমার লেখার শিরোনাম ‘উৎসর্গ’ নাতি দীর্ঘ সারমর্ম হচ্ছেÑ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষায় স্বাধীন স্বদেশে আমরা যারা সুস্থ দেহে আছি তারা সময়ানুযায়ী রক্ত দান ও মরনোত্তর চক্ষু দানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। আজ দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুশীল সমাজের প্রতি আহŸান সীমিত সামর্থে মানবিক চেতনায় দৈহিক ভাবে সুস্থ সমায়ানুযায়ী রক্ত দান ও মরনোত্তর চক্ষুদানে নিজ অংশীদারিত্বে অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করি।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, পাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *