রক্তিম ও আভা একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসে ! কেউ কাউকে ছেড়ে এক মিনিটও থাকতে পারে না, সেই কলেজ থেকে ওদের প্রেম ! বাবা মা মারা যাবার পর অনেক কষ্ট করেই মামা বাড়িতে মানুষ আভা। স্বভাবে যেমন মিষ্টি, দেখতেও তেমন সুন্দরী। সেআবার পড়াশুনাতেও তেমনই মেধাবী, কিন্তু হলে কি হবে, তার যে বাবা মা নেই, মামা মামীর গলগ্রহ হয়ে দিন কাটাতে হয় ওকে। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো পায় না আভা, বাড়ির সমস্ত কাজ করতে হয়, নিজের স্কলারশিপের টাকায় পড়াশুনা করে আভা। এতো কষ্টের মধ্যে একটাই সান্তনা সেটা রক্তিমের ভালোবাসা।
দিনটা ছিল রবিবার। বাড়িতে কেউ নেই, সবাই মামার বন্ধুর ছেলের বিয়েতে গেছে। সব কাজ শেষ করে ক্লান্ত শরীরে একটু বিশ্রাম নিতে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে আভা । আর শুয়ে শুয়ে রক্তিমের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ টা যে কখন লেগে এসেছিলো তা ওর মনে নেই।
ওর যখন সম্বিত ফিরে এলো তখন অনুভব করলে মুখটাকে যেন সজোরে চেপে ধরেছে, আভা অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না, যখন ছাড়া পেলো তখন সব শেষ, ধর্ষিত হলো আভা নিজেরই মামাতো ভাইয়ের বন্ধু অরূপের কাছে। ধর্ষিত হয়ে আভা পড়ে রইলো বিছানায় নিস্তেজ হয়ে, শরীরটা টেনে তোলার ক্ষমতা নেই ওর। সারাটা রাত কেটে গেলো, পরের দিন সকালে কোনরকমে বিছানা থেকে উঠে সমস্ত কাজ করলো অসুস্থ শরীরে। বিয়ে বাড়ি থেকে সবাই ফিরতেই মামিকে সব জানালো আভা । সব শুনে মামা বাড়ির কেউ কোন উক্তি বাদ করলো না, উল্টে আভাকেই চরিত্রহীনতার দোষ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। আভা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। একবার ভাবলো রক্তিমের কাছে যাবে। আবার ভাবলো না আমার কলুষিত জীবনের সাথে রক্তিমের জীবনটা জড়াব না। সাত পাঁচ ভাবছে এমন সময় পেছন থেকে কে যেন ডেকে উঠলো, পিছন ঘুরে তাকিয়েই দেখে রক্তিম দাঁড়িয়ে আছে। আভা মাথা নিচু করে নেয়, রক্তিম আভার মুখ দেখেই বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। অনেক প্রশ্ন করার পর আভা ভেঙে পড়ে, সব খুলে বলে রক্তিমকে কিভাবে সে ধর্ষিত হয়েছে। কিভাবে এক নরপশু তার দেহটাকে রক্তাক্ত করেছে! রক্তিম সব শুনে বলে- এতে তোমার কি দোষ, তুমি মাথা নিচু করছো কেন ? সমাজের যে কাপুরুষ এমন করেছে তার মাথা নিচু করার কথা, তুমি দুঃখ পেও না, আমি আছি তোমার পাশে। আমি আজই তোমায় বিয়ে করে তোমার মর্যাদা দেবো, তবে তোমায় করুণা বা দয়া করে নয়, সত্যিকারের ভালোবেসে! এই বলে আভার, হাত দুটো চেপে ধরে রক্তিম! তারপর রক্তিম আভাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে বাড়িতে! রক্তিমের বাবা বিখ্যাত ক্রিমিনাল উকিল দিবাকর বাবু। বাড়িতে এসে বাবাকে সব খুলে বলে রক্তিম। মা রিনা দেবী মারা যাবার পর বাবাই একমাত্র বন্ধু রক্তিমের। সব শুনে আভা ও রক্তিমকে সঙ্গে করে নিয়ে থানায় যায় রক্তিমের বাবা দিবাকর বাবু। কিছুদিন সময় লাগলেও যাবৎজীবন সাজা হয়ে যায় আভাকে ধর্ষণকারী অরূপের! তারপর দিবাকর বাবু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দেন রক্তিম ও আভার ! আভা ফিরে পায় নতুন এক জীবন! রক্তিম ও আভা তাদের জীবনের পথ চলা শুরু করে !
লেখক: কবি, গল্পকার ও সম্পাদক, উত্তর ২৪ পরগণা, ভারত।