অনন্য কথা ডেস্ক: গরমের সঙ্গে দোসর হয়েছে মাস্ক। এবার ঈদের সাজ মানেই নববর্ষ গ্রীষ্মের দাবদাহ আর তার উপর নিউ নর্মালে এখন অন্যতম অ্যাকসেসরিজ মাস্ক।
করোনা মহামারীতে এ যাবৎ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম মাস্ক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মেডিকেল বা সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার করা উচিত সকল প্রকার স্বাস্থ্যকর্মীদের যারা সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে আসেন, বৃদ্ধ এবং সেইসকল মানুষ যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আছেন।
যেসকল মানুষ সুস্থ আছেন অথবা উপরোক্ত কোনো ক্যাটাগরিতে পড়েন না তাদের উচিত কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা। বিশেষঞ্জরাও জনসাধারণকে কাপড়ের মাস্ক পরতে উৎসাহিত করেছেন।
আমরা জানি যে মুখে মাস্ক ব্যবহার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এবং অনেক জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। বিষয়গুলো কিন্তু কেউই পুরোপুরি মানার চেষ্টা করিনা। সেটা হোক সচেতনতার অভাবে অথবা হোক অজ্ঞতার ফলশ্রুতি।
মাস্ক হোক ফ্যাশনেবল কিন্তু কার্যকরীঃ
এখন অনেকের কাছে মাস্কই হয়ে উঠেছে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। নানা নকশা ও স্বকীয়তা ফুটে উঠছে মাস্কে। রং-বেরঙের বিভিন্ন মাস্কের গুণগত মান ও দামেও আছে পার্থক্য। সস্তায় মাস্ক কিনে ব্যবহার করলেই হবে না, সেটি কতটুকু আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে তা-ও জানতে হবে। বিভিন্ন গবেষনায় প্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকরী থেকে কম কার্যকরী বিভিন্ন প্রকার মাস্কের উল্লেখ করা হলোঃ
ঘ৯৫ এবং ঘ৯৯ মাস্ক
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এই দুই ক্যাটাগরির মাস্ক। বিভিন্ন সংস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের এই দুইটি মাস্ককে সবসময় খুব বেশিই প্রাধ্যন্য দিতে বলে। এর কারণ হচ্ছে এই মাস্কগুলো খুব শক্ত ভাবে নাকে এবং মুখের সাথে আটকে থাকে যার ফলে সহজে এরোসল মুখে প্রবেশ করতে পারেনা। এন ৯৫ এবং এন ৯৯ মাস্ক। ঝুকি প্রতিরোধ মাত্রা ছিল প্রায় ৯৫-৯৯ ভাগ।
কিভাবে এটি আপনি পরিষ্কার করবেনঃ
এন৯৫ মাস্ক পানি দিয়ে ধুবেন না। ধরুন আজকে ব্যবহার করেছেন এরপর এটিকে চুলার উপরে জীবাণু মুক্ত কাঠের ক্লিপ দিয়ে আটকে ৭ দিনের জন্য ঝুলিয়ে রাখুন তবে মনে রাখবেন এন ৯৫ মাস্ক কখনোই সূর্যের আলোতে শুকাতে দিবেন না। তাতে মাস্কটির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। আবার অন্যভাবে, এটি একটি কাগজের প্যাকেটে রেখে মুখ আটকে ৭ দিন রেখে দিন, তারপর ব্যবহার করেন। এটি সর্বোচ্চ ৫ বার ব্যবহার করা ভালো।
সার্জিক্যাল মাস্ক
এটা সচরাচর প্রায় সবাই- ই ব্যবহার করে থাকেন। সার্জিক্যাল মাস্ক নির্মিত হয় নন- ওভেন ফেব্রিক দ্বারা সেজন্য যেসব স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট এন ৯৫ বা এন ৯৯ সহজলভ্য নয় তারা নির্দ্বিধায় এটি ব্যবহার করতে পারেন। এপ্রিল মাসে করা একটি স্টাডি দেখায় সার্জিকাল মাস্ক অনেকাংশেই ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। কিভাবে এটি আপনি পরিষ্কার করবেন:
যদি এটি শুকনো থাকে, স্তর এবং আকারটি অক্ষত থাকে তবে এটি একটি কাগজের প্যাকেটে রেখে মুখ আটকে ৭ দিন রেখে দিন, তারপর ব্যবহার করেন। যদি প্লাস্টিকের পাত্রে মাস্ক রাখেন তবে আর্দ্রতা জমে ব্যাকটেরিয়া আরো বেড়ে যেতে পারে। সার্জিক্যাল মাস্কগুলি পানি দিয়ে ধুবেন না। তাতে মাস্কের ফিল্টারিং পর্দা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ওটি তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে। তবে সার্জিক্যাল মাস্ক একবার ব্যবহার করাই ভালো।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গবেষকরা একটি পেপারে প্রকাশ করেছেন ২ স্তর বিশিষ্ট ৬০০-থ্রেড-কাউন্ট তুলার সাথে সিল্ক অথবা সিফন-ফ্লানেলের মিশ্র ধরনের কাপড়ের মাস্ক যা প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র কণা (৩০০ন্যানোমিটারের নিচে) প্রতিরোধ করতে পারে এবং ৯০ শতাংশ কণার(৩০০ ন্যানোমিটার থেকে বড়) ক্ষেত্রে ভীষণ কার্যকরী। তাছাড়াও তুলা এবং ফ্লানেল,সিল্ক এবং সিল্কের ৪ স্তরের কাপড়ের মাস্ক এবং ৬০০-থ্রেড-কাউন্ট তুলার কাপড়ের মাস্ক সার্জিকাল মাস্কের চেয়েও বেশি কার্যকরী । তাছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দেয় তিন স্তর বিশিষ্ট সিল্কের মাস্ক পরিধান করতে যাতে একটি স্তর কাজ করবে ছাকুনি হিসেবে, অপর দুটি থাকবে যথাক্রমে শোষক এবং বাতাসের কণা প্রতিরোধক পলিএস্টার দ্বারা নির্মিত। ওষষরড়হড়রং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দেখায় তিন স্তর বিশিষ্ট একটি সিল্ক শার্ট অথবা ১০০% সুতি কাপড়ের তৈরি মাস্ক সার্জিকাল মাস্কের মতোই শক্তিশালী।
কিভাবে এটি আপনি পরিষ্কার করবেনঃ
হালকা গরম পানির সাথে গুঁড়ো সাবান দিয়ে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে কলের পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এর পর রোদে অথবা চুলায় ভালো মতো শুকিযে নিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। ৩ লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা ভালো। তবে এটি ২০ বারের বেশি ধোয়া ঠিক নয়।
সারাক্ষণ মুখে মাস্ক বাড়াচ্ছে ত্বকের সমস্যা, কী করবেনঃ
অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসকে ফাঁকি দিতে এখন বেশির ভাগ মানুষের জীবনের অঙ্গ নাক মুখ ঢাকা মাস্ক। এর ফলে বাড়ছে ব্রণ তথা ত্বকের সমস্যা-মূলত মুখেই বেশি ব্রণ দেখা যায়। তবে বুকে, পিঠে বা নিতম্বেও এই স্কিন র্যাশ হতে পারে। সার্জিকাল ফেস মাস্ক যে উপাদানে তৈরি, তা ভাইরাস আটকাতে অত্যন্ত কার্যকর হলেও ত্বকবান্ধব নয়। তুলনামূলক ভাবে সার্জিক্যাল মাস্ক বা কিছু না হলেও পরিষ্কার সুতির কাপড়ের মাস্ক অনেক বেশি নিরাপদ। রঙিন মাস্ক থেকে অ্যাকনে ও ইরাপশনের ঝুঁকি বাড়ে বলে । মূলত রঙে ব্যবহৃত রাসায়নিক এই সমস্যার জন্য দায়ী। অ্যাকনে বা এই জাতীয় স্কিন র্যাশের অন্যতম কারণ রোমকূপের মুখ আটকে যাওয়া। বিশেষ করে যাঁদের সংবেদনশীল ত্বক, তাঁদের একনাগাড়ে মাস্ক পরার কারণে ব্রণ-সহ নানা র্যাশের ঝুঁকি বাড়ে। এর হাত থেকে রেহাই পেতে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তবেই মাস্ক পরতে হবে। যাঁদের অত্যন্ত বেশি ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি অয়েল ফ্রি লোশন লাগিয়ে মাস্ক পরবেন।
কী করবেন
একই মাস্ক দীর্ঘক্ষণ পরে থাকবেন না, কারণ মাস্ক পরার পরও হাঁচি-কাশি চলতে থাকে দীর্ঘদিন একই মাস্ক ব্যবহার করবেন না বাতিল মাস্ক সাবধানে ও সতর্কতার সঙ্গে নষ্ট করুন মাস্ক পরার পর, মাস্ক-এ যখন তখন হাত দেবেন না, এতে সংক্রমণের চান্স বাড়ে বাড়িতে মাস্ক ব্যবহার করবেন না এসি চালিয়ে গাড়ির ভেতর মাস্ক পরবেন না বাড়ির সদস্যদের আলাদা আলাদা মাস্ক থাকা বাঞ্ছনীয়
দীর্ঘক্ষণ বদ্ধ পরিবেশে কাজের পর, মাস্ক খুলুন এবং খোলা জায়গায় অন্তত আধঘন্টা বড়ো বড়ো শ্বাস নেওয়া শ্বাস ছাড়া করুন। প্রতি ১ ঘন্টা অন্তর আধ গেলাস করে পানি পান করুন ও ইউরিন আউটপুট বাড়ান।
মনে রাখবেন কিন্তু, মুখে সবচেয়ে পাতলা মাস্ক পরলেও জীবানু ৫ ফুট পর্যন্ত যায়। যারা মাস্ক পরেন না তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যারা শুধুমাত্র সুতি কাপড় দ্বারা মাস্ক পরেন তাদের থেকে ৫৪ শতাংশ বেশি। আপনি যদি কাগজ দিয়ে বানানো মাস্কও পড়েন সেটাও অন্তত ৩৯ শতাংশ কার্যকর। নিজের স্বার্থে, জাতির সুস্থতার জন্য অবশ্যই নিয়ম মেনে মাস্ক পরুন।