আজকের শিশু আগামীদিনের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। যে কোন দেশ ও জাতির নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী শিশুরাই বহন করে থাকে। আর সেই শিশুকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রথমে প্রয়োজন একজন আদর্শ মায়ের। একজন আদর্শ মায়ের পক্ষেই সুশিক্ষিত ও আদর্শ মহামানব পৃথিবীকে দান করা সম্ভব। জন্ম গ্রহণের পরই একটি শিশু সাক্ষাৎ পায় মাতা পিতা ভাই-বোন ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের। শিশু যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে পরিবারের সকল সদস্যদের প্রভাব পরে ঐ শিশুটির উপর। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়, যার ফলে পরিবারের সদস্যদের চাল-চলন, কথা-বার্তা, সবকিছুই অনুকরণ করতে শিখে। একটি শিশু যে ভাষার মা-বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করে সেই ভাষায় শিশু কথা বলতে শিখে।
শিশুর প্রতি একজন আদর্শ মা যতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে আমার মনে হয় একজন বাবা তা পারে না। কারণ শিশু তার মাকেই অনুসরণ করতে বেশি ভালবাসে। মাকেই বেশি সময় কাছে পায় বলেই মা-ই শিশুর প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন। এই প্রাথমিক স্তরে মায়ের ভূমিকাই বেশি। তাই মায়ের শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যৎ বুনিয়াদ। মা যদি আদর্শবান ও শিক্ষিত হন তবে তিনি একজন আদর্শ শিশু গঠন করতে পারবেন। শিশুর স্বাস্থ্য, চরিত্র, শিক্ষা কিভাবে সুন্দর হতে পারে, কিভাবে তার শিশুর ভবিষ্রৎ উজ্জল হতে পারে সেদিকে একজন মা-ই সচেতন হতে পারেন। এ সময় শিশুর প্রথম ও প্রধান শিক্ষিকা মা। সুতরাং মায়ের শিক্ষা লাভ করা অপরিহার্য। এ কারণে নারী শিক্ষার প্রতি আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া একান্ত প্রয়োজন। একজন শিক্ষিত মা পারেন সন্তানদের সুন্দর আদর্শবান সত্যবাদী ও সৎচরিত্র গঠনে সহায়তা করতে। আবার মা পারে দুশ্চরিত্র ও সমাজবিরোধী সন্তান জাতিকে উপহার দিতে। মায়ের উচিত সন্তানের দোষত্র“টি না লুকিয়ে বা প্রশ্রয় না দিয়ে সংশোধনের বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তাই বিশিষ্ট সমাজ সেবক নেপোলিন বলেছিলেন “আমাকে একজন আদর্শবান শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি উত্তম জাতি উপহার দিব।”
শিশু যাতে সুন্দর সৎ, চরিত্রবান, আদর্শ হিসাবে গড়ে উঠতে পারে সেদিকে প্রত্যেক মায়ের খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর সাথে কখনও মিথ্যা বলা ঠিক নয়। অনেক সময় মায়েরা শিশুদের কান্না বন্ধ করার জন্য বা সান্ত্বনা দেবার জন্য মিথ্যা কথা বলেন, কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা ঠিক না। কারণ মা মিথ্যা বললে শিশু মিথ্যা বলা শুরু করবে।
রাতে ঘুমানোর সময় প্রত্যেক শিশুই গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই তাদের রাক্ষসের গল্প, দানবের গল্প অথবা পাতালপুরীর রাজকন্যার কিংবা অবাস্তব, মিথ্যা গল্প না শুনিয়ে নবী ও রসুলদের, বা বড় বড় মণীষীদের কিংবা সৎ, চরিত্রবান মহামানবদের জীবনের গল্প যদি শুনানো হয় তাহলে শিশুরাও চাইবে ভবিষ্যত জীবনে ঠিক ঐরকম একজন আদর্শ মানুষ হতে।
শিশুদের প্রতিটা মায়ের উচিত ছোটবেলা থেকে নিজ নিজ ধর্মের শিক্ষা দেয়া। ছোট থেকে সত্য কথা বলা, অন্যায় কাজ করবে না এমন সব শিক্ষা দেয়া মায়ের পক্ষেই সম্ভব।
একজন মা পারেন শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা শিখাতে। আর এই নিয়মানুবর্তিতা একজন মানুষের বড় গুণ। পৃথিবীতে যে বেশি নিয়মমাফিক কাজ করতে পেরেছেন, তিনি জীবনে সফলতা লাভ করেছেন।
শিশুর বয়স ৪/৫ বৎসর হলে সে যায় শিক্ষা লাভ করার জন্য বিদ্যালয়ে। সেখানে সে পায় তার বন্ধু-বান্ধবীদের দেখা, পায় শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে। তখন সে হয় একটি বড় পরিবারের সদস্য। বিদ্যালয়ের ভূমিকাও একজন শিশুকে আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে তোলার কাজ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
শিশুকে বাহিরের জগতের সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য এবং নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে মা’কে নিশ্চিত মনে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বিদ্যালয়ে শিশু থাকে মাত্র কয়েক ঘন্টা। অধিকাংশ সময় কাটে তার পরিবারে মা বাবার সাথে। তাই মা যদি শিশুর যতœ না নেন তবে তার শিক্ষারও কোন উন্নতি হতে পারে না।
বিদ্যালয়ে শিশুকে যে শিক্ষা দেয়া হয় তার অনুশীলন করতে হয় বাসায়। যদি বাসায় অনুশীলনের অভাব হয় তবে শিশুর শিক্ষার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক মাকে দেখা যায পরিবারে শিশুর যতœ না নিয়ে শিশুদের দোষারোপ করে থাকেন। তা আসলে ঠিক নয়। নিজ দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মায়ের অবশ্য কর্তব্য। তাই আমার দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝেছি শিশু শিক্ষায় মায়ের ভূমিকাই প্রধান। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকা মাধ্যম মাত্র।
পরিশেষে বলা যায় আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই শিশুকে আদর্শ চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম ও প্রধান।