দেশের বেশিরভাগ কৃষকের জমির পরিমাণ বা মালিক এক একর, ২য় পর্যায়ে দুই একর থেকে তিন একর এবং ৩য় পর্যায়ে তার অধিক হতে পারে। এই জমিগুলির মধ্যে আছে, বেলে/দো-আঁশ মাটি, এটেল মাটি, উঁচু নিচু আবার জলাবদ্ধতা সম্বলিত। এই সকল জমিতে সব ধরণের ফসল উৎপন্ন হয় না। যার জন্য কৃষককে জমির অবস্থান বুঝে ফসল উৎপাদনের চেষ্টা বা পরিকল্পনা করতে হয়। এরপর প্রাকৃতিক দুর্যোগে অর্থাৎ খরা, অনাবৃষ্টি ও বন্যার প্রভাব ফেলে। তারপরও বাজারের মূল্যের উপর নির্ভর করে ফসলের চাষ। যে পণ্যের মূল্য কম সে ফসল কৃষক উৎপন্নে উৎসাহিত হয় না। কিংবা যে উৎপাদনে ব্যয়বহুল তাও কৃষক উৎপাদনে উৎসাহিত হয় না বা পারে না। আবার অনেক সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণের কারণে অনেক লাভজনক ফসলও উৎপন্ন করতে পারে না যেমন আখ চাষ। আখ চাষ করলে চিনি কলগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকতে হয় অথচ চিনি কলগুলি দিনের পর দিন লস দিচ্ছে বলে জানা যায়। আবার চিনির অভাবও দেখা যায় যার জন্য চিনির মূল্যও বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ সরকার যদি নিয়ম করে যারা চিনি কলের আওতায় আখ চাষ করবে তারাই শুধু চিনি কলগুলোকে আখ সরবরাহ করবে আর বাদ বাকি কৃষক যারা নিজের দায়িত্বে আখ চাষ করবে তারা নিজস্ব উদ্যোগে গুড় প্রস্তুত করবে। তাহলে এই গুড় দিয়ে চিনির চাহিদা অনেকাংশে কমানো যেতো এবং কৃষকও লাভবান হতো বলে মনে হয়। অন্যদিকে এলোপাথারিভাবে এবং অপরিকল্পিত গভীর নলক‚প ও শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনের কারণে কৃষকগণ কিছু আগে ইরিগেশনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যার জন্য ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে ব্যহত হয়েছে। যার দরুণ আজ ডাল ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বর্তমানে ঐ সকল গভীর নলক‚প ও শ্যালো টিউবওয়েলগুলো বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কৃষকগণ ঋণের বোঝা নিয়ে বিপাকে আছে। দেশের কৃষকগণ বা কৃষি পরিবার আগে দেশে উৎপাদিত সরিষার তেল খেতে অভ্যস্ত ছিল কিন্তু বর্তমানে সকলেই সোয়াবিন জাতীয় তেল খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যা দেশে উৎপাদন হয় না। যা সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল এবং যার উৎপাদন হয় ভিন দেশে। এজন্য আমাদের দেশের উৎপাদিত সরিষা, তিল, মষনে, রাই জাতীয় ফসল বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অথচ আমরা শুনেছি তিল জাতীয় ফসল থেকে উৎপন্ন তেল সবচাইতে স্বাস্থ্যসম্মত এবং এই তিল জাতীয় সেই ফসলই উৎপন্নের উদ্যোগ নেওয়া শ্রেয়। এখানে মূল্য কম/বেশির কোন কথা উঠা ঠিক নয়। তাই কৃষককে এটা অনুধাবন করাতে হবে যে, কম ব্যয়ে অধিক ফলনে আয় বেশি।