• Tue. Nov 19th, 2024

ছোনেকার ঘাট (মোঃ হামিদুল হক)

 

ঘটনার বছর ২০০২ সাল,  সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা চলনবিলের মাঝেই অবস্থিত! কনকনে শীত উপজেলার কলোনীতে, দরজাটা একটু ভাঙ্গা থাকার কারণে কাঁথা কম্বলের ভেতর দিয়েও শীতের প্রচন্ড তীব্রতা বোঝা যায় ! আর শীতের সকালে একটু মর্নিং ওয়ার্ক করে উপজেলা গেটের হোটেলের ডাল পরোটা আর এক কাপ চা যেন মোনটা জুড়ায়ে দেয় ! তাই এই নেশায় কুয়াশা ভেজা হাড় কাঁপানো শীতে চাদর আর মাফলার পরে হাঁটতে বের হলাম। অফিস ক্যাম্পাসে ঢুকতেই একটা বারান্দা থেকে দাঁতে দাঁতে বারি খাওয়া শব্দের সাথে উঁহু উঁহু শব্দটাও কানে এলো। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একটা মাঝ বয়সী রোগাশোগা মহিলা শীতে প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছে। কেননা তার গায়ে ছিল শুধুমাত্র একটা কাপড় আর হাতে দুটে আধলা ইট, হয়তবা তার আত্ম রক্ষার জন্য। বুঝতে আর বাকি রইলো না সে মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং সে রাস্তাতেই থাকে ! আমি ফেরার পথে ওর জন্য ডাল আর পরোটা নিয়ে এলাম। যদি দিতে পারি অন্ততপক্ষে সাময়িক ক্ষুধা তো মিটাতে পারবো ! কিন্তু ওর কাছে যেয়ে দিতে সাহস হলোনা, তাই দূর থেকেই ছুঁড়ে দিয়ে বললাম খা-রে! দেখলাম খুশি মনেই নিয়ে খাওয়া আরম্ভ করলো। মেসে ফিরে গিয়ে সবাইকে বলাতে ওরা হাসতে হাসতে বলে উঠল “আরে ঐতো ছোনেকা পাগলি”! এভাবেই ওর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ! এই ছোনেকা এক কাপড়ে থাকতো, গোসলের সময় যখন পুকুর ঘাটে কেউ থাকতো না তখন সে তার পুরা গায়েরকাপড় খুলে পানিতে নেমে গোসল করতো আর তখনই দুষ্টু ছেলেরা কাপড় লুকাতো। বাচ্চা ছেলেরা অনেক আনন্দ উপভোগ করার জন্য বেশ হৈচৈ করতো। তাতে অফিসের কাজকর্মে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হতো ! এমতাবস্থায় সবাই মিলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী মহোদয়ের কাছে এর সমাধান চাইলেন ! বিচক্ষণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দিলেন ওকে ধরে বেঁধে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির ! বিষয়টা অত্যন্ত কঠিন কেননা ছোনেকা প্রায় সবসময়ই উলঙ্গ বা অর্ধ উলঙ্গ থাকে ! ঐ অবস্থায় প্রায় ১০০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে ওকে নিয়ে হেমায়েতপুর পৌঁছাতে হবে ! হ্যাঁ সমাজসেবা অফিসার দু’জন সহযোগী নিয়ে মিশন সফল করলেন ! কয়েক দিন পর এতো বড? একটা কাজ করার জন্য ওনার সংবর্ধণার ব্যবস্থা করলেন ! ওনার বক্তব্যের সময় সবাই ওনাকে প্রশ্ন করলেন- কেমন করে এতো বড় একটা কঠিন কাজ করতে পারলেন ?

উনি বললেন- আমার স্ত্রীর একটা শাড়ি দিয়ে ওকে প্যাঁচায়ে বেঁধে ফেললাম, তারপরে গাড়িতে তুলে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে ফিরে এলাম ! সবার করোতালিতে মূখরিত হাউজ ! এরপরে পুরষ্কার দেয়ার পালা !

যতো পুরষ্কার সবই সমাজসেবা অফিসারের স্ত্রীর জন্য, দামি শাড়িসহ অন্যান্য অনেক পুরষ্কার। আমি একটু অবাক হলাম, কষ্ট করলেন কে আর পুরষ্কার পাচ্ছেন কে ?পরে বুঝলাম কখনো কখনো কার্য সম্পাদনকারি ব্যাক্তির চেয়ে অনুপ্রাণিত ত্যাগী ব্যাক্তির অবদানই বেশি থাকে !

বর্তমানে আমরা অদৃশ্য শত্র“ করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছি। কোন অবহেলা না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজে সুস্থ থাকুন পরিবার ও প্রিয়জনদের সুস্থ থাকতে সচেষ্ট হোন। আপনার সচেতনতাই পারে দেশ ও জাতিকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ফিরিয়ে দিতে। আসুন সবাই মাস্ক এবং সাবান/ স্যানিটাইজার ব্যবহার করি, সুস্থ পরিবেশ, সতেজ জীবন ফিরিয়ে আনি।

                           -সম্পাদক

                   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *