গুড়া গুগা বৃষ্টি হচ্ছিল, ছাতা ছিল না সাথে। এই বৃষ্টির মধ্যেও হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম।
রাত একটা।
সেন্ট ক্যাথরিন স্ট্রিট থেকে দু’ফোর্ট তারপর টানেল দিয়ে সেন্ট এনতোয়ায় আসলাম।
ভিনেত স্ট্রিটের মাথায় এসে চমকে গেলাম। রাস্তাটা নির্জন। বামপাশে পার্ক। পার্কের ভিতর ঘুটঘুটে অন্ধকার, বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম পার্কের ভিতর।
অন্ধকার, তারপরেও পার্কের ভিতর তাকালাম। না কেউ নেই। কান্নার আওয়াজ আসছে।
পার্কের বেঞ্চের উপর নজর পরলো। আবছা কি যেন নড়ে উঠলো। গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল।
বকুল..
কে?
সামনে পিছনে তাকালাম, কেউ নেই। অনেকক্ষণ চুপ!
আবারো আমার নাম ধরে ডাকলো মেয়ে কন্ঠে।
বকুল
কে?
আমার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেললো,
পিছন থেকে ঘাড়ে হাত রাখলো। আবারো ডাকলো,
বকুল
আমার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেল, সাহস সঞ্চয় করে বললাম- কে আপনি। দোয়া দরুদ পড়তে থাকলাম।
তোমার নায়িকা।
প্রচন্ড ভয় পেলাম, এক দৌড়ে সেন্ট জ্যাক স্ট্রিটে আসতেই টেক্সি পেলাম। টেক্সিতে ঢুকে পরলাম।
টেক্সি ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরলাম।
কিন্তু একি! টেক্সির ভিতরে বসে আছে এক মেয়ে…।
২.
প্রচন্ড গরম। কাজ শেষে বাসায় ফিরছি। গত সপ্তাহে ভিনেত পার্কের অলৌকিক ঘটনা এখনো মন থেকে দূর করতে পারি নাই। তবুও আজ রাতে কাজ শেষে প্রশান্তি পেতে সেই ভিনেত পার্কে আসলাম।
আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার নাই। ঝলমলে আলো। একেবারে দিনের আলোর মতো।
একটা বেঞ্চে বসে গুন গুন করে গান করছি। বাতাস গায়ে লাগছে। বেশ সজীব লাগছে নিজেকে।
চারিদিকে তাকালাম, কেউ নেই।
হঠৎ কি মনে হলো, গত সপ্তাহের যে গায়েবী মেয়ে কন্ঠে বলেছিল আমি তোমার নায়িকা।
আমি জোর গলায় বললাম- আমার নায়িকা আছো’?
আবারো ডাকলাম নায়িকা আছো?
তৃতীয়বার না যদি কা আ…। শেষ করতে পারলাম না।
পার্কের সমস্ত লাইটগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটি গাছের ডালে বাতি জ্বলে আবার নিভে গেলো। সেই গাছের উপর থেকে কান্নার আওয়াজ আসলো। গা ছম ছম করছে। কপাল থেকে ঘাম ঝরছে, মোছার সময় নাই।
বেঞ্চ থেকে উঠতে চাইলাম, পারলাম না। পা দুটো ভারী হয়ে আছে। খাঁটি বাংলায় আমার নাম ধরে মেয়েলী কন্ঠে…
বকুল
কে?
তোমার নায়িকা।
একটা সুগন্ধ বাতাসে ভেসে এলো। কেউ আমার পাশে বসলো, একই বেঞ্চের থেকেই বলছে..
আমি রোজী, রওশন জাহান রোজী। তোমার নায়িকা।
ত্রিশ বছর পূর্বের কথা…
রোজীব সাথে মঞ্চে নাটক করেছি, টিএসসিতে প্রতিদিন আড্ডা দিয়েছি… সেই রোজী…না না না। অসম্ভব।
না।
৩.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে চোখ মেলে দেখি আমি পার্কের বেঞ্চে শুয়ে আছি। রাতের সমস্ত ঘটনা মনে পরে শিউরে উঠলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ছয় ঘন্টা পরে জ্ঞান ফিরেছে।
রাতে বাসায় ফিরিনি। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
বাসায় যেতে পা বড়ালাম।
স্ত্রী গটমট করে আমার দিকে তাকাল কিছু বললো না।
ওয়াসরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম, ভয়ে আমার সমস্ত অনুভূতি হারিয়ে গেল।
আয়নায় আমার ছবি নাই। আয়না থেকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে রোজী। রওশন জাহান রোজী।
বের হয়ে গেলাম ওয়াসরুম থেকে।
কি হয়েছিল রোজীর? কেন সে আমার পিছনে? রোজী এখন কোথায়?
শেষবার তাকে দেখেছিলাম জার্মান কালচারাল সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর হাত ধরে। আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু কথা হয় নাই। আমার সাথেও ছিল আমার স্ত্রী।
আজ এত বছর পর ওর কথা ভেবে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো।
কত স্মৃতি, কত কথা, রিকশায় ঘুরে বেড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা, রোজীর ঠান্ডা লাগা। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো এসব ভেবে।
রোজীর অবস্থা জানতে ঢাকায় ফোন করে ওর খবর জেনে ভয়ে ঘেমে গেলাম।
বছর পাঁচেক আগে রোজী তার কোলের শিশুকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে।
রোজীর অতৃপ্ত আত্মা আমার কাছে কেন আসে?
আমার কি করা উচিত ভাবতে ভাবতে লিভিং রুমে এসে জানালার পর্দা হাত দিতেই চমকে গেলাম।
রোজী। আমার সামনে সোফায় বসে তাকিয়ে আমার দিকে।
লা ইলাহা ইলা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলেমিন। বুকে ফু দিলাম। সাথে সাথেই মিলিয়ে গেল।
মনটা ব্যথা ভরে গেছে। বুকের ভিতর কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মন হচ্ছে।
পুরো ঘটনাটা আমার স্ত্রীকে খুলে বলি।
বিকেলে এক হজুরকে বাসায় নিয়ে আসলো আমার স্ত্রী।
দোয়া কালমা পড়ে। রোজীর জন্য, তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা হলো।
রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন ভৌতিক কিছু নজরে আসছে না।
পাবনা ও ঢাকা থেকে একযোগে প্রকাশিত রুচিশীল সাহিত্য পত্রিকা ‘মাসিক অনন্য কথা’ পত্রিকাটি পড়–ন, আপনার সূচিন্তিত মতামত দিন।
বৃহত্তর পরিমন্ডলে আপনার প্রতিষ্ঠানের বহুল প্রচার ও প্রসারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন। বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন সম্পাদকীয় দপ্তরে।
আতাইকুলা রোড, শালগাড়িয়া, পাবনা।
htps:/ ananyakotha.com/ facebook/ANNAYAKOTHANEWS
E-mail: akbdnews@gmail.com
সম্পাদক: ০১৮৮০০৬২৬০০/ কার্যকরী সম্পাদক: ০১৭১২৫৮৩৩৭০।