• Mon. Dec 2nd, 2024

অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতা সুরক্ষা

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ তাদের পুরনো রীতি নীতি সব ছেড়ে নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হচ্ছে। তারই এক নতুন ট্রেন্ড অনলাইন শপিং। আজ মানুষকে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না তার প্রয়োজনীয় পন্য কিনতে, চাইলেই ঘরে দরজায় চলে আসছে। সোশ্যাল মিডিযায় মানুষ সারাদিন থাকার কারনে তাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম। এই অনলাইন শপের অন্যতম বৈশিষ্ট হল আপনাকে তারা প্রোডাক্ট এর ছবি দেখাবে অনলাইনে, যদি আপনার পছন্দ হয় তাহলে তারা আপনার বাসায় পৌছে দেবে সেই পন্য। মানে এখন ঘরে বসেই আপনি পাচ্ছেন সমস্ত কিছু কেনার সুবিধা। আপনি অনলাইনে অর্ডার করবেন অফলাইনে পেয়ে যাবেন।
মানুষের চাহিদার আজ পরিবর্তন ঘটেছে। অনলাইনে কোরবানীর গরু, কবুতর, হাঁস-মুরগিও পাওয়া যায় আবার সৌখিন জিনিসও বাদ যায় না এই সুযোগে যারা কখনো দোকান খুলে পণ্য বিক্রির চিন্তাও করেননি, তারা হয়ে যাচ্ছেন অনলাইন মার্কেটার তারা ঘরে বসেই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পচ্ছেন যা ছিল তার শখের পণ্য, তা-ই হয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বিক্রি করছেন অনলাইনে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে সব ধরনের পণ্যই পওয়া যায় – পোশাক, ঘড়ি, টুপি সবকিছু এখন অনলাইনে টিকেট বিক্রিসহ আরো অনেক ধরনের সেবা দেয়া হয় এমনকি স্বাস্থ্যসেবাও দেয়া হয় অনলাইনে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমেও দেয়া হয় চিকিৎসা পরামর্শ”
বাংলাদেশে এখন বছরে এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয় অনলাইনে আর প্রতিদিন অনলাইনে ডেলিভারি দেয়া হয় ২০ হাজার অর্ডার দেশে ওয়েবভিত্তিক অনলাইন শপ আছে এক হাজার ফেসবুক ভিত্তিক আছে ১০ হাজারেরও বেশি অনলাইনে পণ্য ক্রয় কিংবা সেবা নিতে গিয়ে কেউ যদি প্রতারিত বা জালিয়াতির শিকার হন, তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিতে পারেন। য়খন কোন পন্য কিনে প্রতারনার শিকার হবেন তখন দেরি না করে আইনের আশ্রয় নিবেন। আপনি যে প্রতারনার শিকার হয়েছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বা প্রমানাদি থাকতে হবে। আপনার পন্য হাতে পাবার দিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের ভিতর ভোক্তা সংরক্ষন আইনে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। আপনার অভিযোগের পর ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর তা তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত করার পর আপনার অভিযোগ প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করবে ভোক্তা আইনে। জরিমানার ২৫ শতাংশ আপনাকে ক্ষতিগ্রস্থ ভোক্তা হিসেবে দেয়া হবে। তাই কোন পন্য কেনার সময় তার সব রকম ডকুমেন্ট আপনি নিযে নিবেন। যে ভাবে অভিযোগ করবেনঃ ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র আছে রাজধানীর পান্থপথের কনকর্ড টাওয়ারে। যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯৭৭০০৮০৭১ ও ০১৯৭৭০৮০৭২ এই নাম্বারে। এছাড়া ইমেইল করতে পারেন পধষষপবহঃবৎ.পধনফযধশধ@মসধরষ.পড়স ঠিকানায। ভোক্তা আইনে অভিযোগ করার পর এখান থেকে প্রতি ১৫ দিন পর আপনার অভিযোগের অবস্থা সম্পর্কে আপনাকে জানানো হবে।
আইনানুযায়ী পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা না থাকা, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ না থাকা, ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা, ফরমালিনসহ ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা, ওজনে কম দেওয়া, রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন ও মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অপরাধ। এছাড়া পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নির্মাণ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করাও অপরাধ।
পন্য কিনে আমরা প্রতারিত হলে কোন কোন উপায়ে আইনি প্রতীকার পেতে পারি তা নিন্মরূপ-
১) দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা।
২) প্রতারণার অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা।
৩) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা।
৪) ১৮৭২ সালের কনট্রাক্ট আইনে প্রতিকার মিলবে।
৫) এ ছাড়া দ্য সেল অব গুডস অ্যাক্ট রয়েছে।
ক্রেতা সুরক্ষায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পরামর্শ : সুপরিচিত বা সুপ্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপ ছাড়া অন্য কোন অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে তাদের কাস্টমার রিভিউগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিতে পারেন। প্রতারণার শিকার হলে বিলম্ব না করে পুলিশকে অবগত করুন।
আর অনলাইনে পণ্য ক্রয় কিংবা সেবা নিতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, ভেরিফায়েড পেজ, মানুষের রিভিউ দেখে নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সব বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর পণ্য অর্ডার করতে হবে। যে কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগে পণ্য সরবরাহ করে এবং নির্দিষ্ট পণ্য হাতে পাওয়ার পর বিক্রয় প্রতিনিধিকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যায় এমন ওয়েবসাইট, পেজগুলো থেকে পণ্য অর্ডার করতে হবে।
সর্বোপরি অনলাইন কেনাকাটায় আমাদের নিজেদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *