• Thu. Dec 5th, 2024

কিংবদন্তী বিস্মৃত রূপকার সহোদর আজহার আলী ও আফছার উদ্দিন আহম্মদের স্মৃতি স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি (এড. জহির আলী কাদেরী)

ভারতবর্ষের অজ গ্রামটি কাদেরী মিঞা বাড়ি ঃ
১৭৪৭ থেকে ১৯৪৭ সাল এই ২০০ বৎসর পর্যন্ত বৃটিশেরা ভারতবষের্র কিং ছিল। অর্থাৎ ওরা দীর্ঘ ২০০ বছর ভারতের তখত ও তাজের একছত্র মালিকানা দখল করেছিল। সেই যুগে সমগ্র ভারতবর্ষের গ্রাম কে গ্রাম ছিল অবহেলিত। ভারতবর্ষের এহেন এক অবহেলিত গ্রাম থেকে উঠে আসা একটি পরিবারের আলোকিত পরিচিতি আজও শিকড় গেড়ে আছে। বিদ্যমান সেই শিকড় টি আজ মহীরুহে রুপান্তরিত হয়ে কাদেরী মিঞা বাড়ি পরিবারের বিস্মৃত গর্বের কথা ও কাহিনী গুমরে গুমরে মরছে। সেই মিঞা পরিবারের পূর্ব-পূরুষ কত সালে যে অজ গাঁয়ে এসে গোড়াপত্তন করেন তার সঠিক দিন ক্ষণ আমার জানা নাই।
তৎকালীন তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ ছিল দূর্লভ ঃ
সেকালে বেশী পুরাতন দিনের কথা তথ্য উপাত্ত সংগৃহীত রাখার ব্যবস্থা আধুনিক কালের ন্যায় ছিল না। তাই সে যুগের গ্রামের মানুষের নিকট হতে ঐ গ্রামের গুণীজনদের অতিতের কোন তথ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা তাদের মনগড়া গল্প কথার ঝুড়ি থেকে তাদের গুনগান করতে উৎসাহের এতটুকু কমতি করতেন না। কিন্তু যখনই তাদের সঠিক বৃত্তান্ত প্রসঙ্গে নির্দ্দিষ্ট কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে তখনি সকলের মুখে প্রায় একই কথা “উনারা আম্যদের আশ্রয়দাতা, উনাদের নাম বললে আমাদের বেআদবি হবে, লোকেরা আমাদের মন্দ বলবে। আমরা কোনদিন উনাদের বিষয়ে কিছু বলতে হবে ভাবতেও পারি নাই। তাই আমাদের এবিষয়ে আদৌ ধারণা নাই। এমনকি উনাদের নাম উচ্চারণ করতে গেলে আমাদের জিহŸা মুখের ভিতর নেতিয়ে থাকে। উনারা এই মিঞা বাড়ির সবাই শুধু আমাদের গ্রামের কেন বহু দূর-দূরান্ত গ্রামের মা-বাবা। মিঞা পরিবারের সবাই আমাদের অভিভাবক। উনারা অনেকদিনের পুরানো জ্ঞানীগুণী আল­াহ ওয়ালা নেককার বান্দা এইটুকই আমরা জানি। এর বেশী আমরা মূর্খ মানুষ, আমাদের দোষ নেবেন না। উনাদের কথা আমরা এর চেয়ে বেশী কিছু বলতে পারবো না। এইটুকু জানি উনারা আমাদের গ্রমের গর্ব। উনাদের দয়ায় আমাদের পূর্বপুরুষ এমনকি আজও আমরা ২মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে রয়েছি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ঃ
মিঞা বাড়ির ৪ পুরুষের জীনিয়্যা’লজির কেবলমাত্র নাম ছাড়পত্রটি অবশেষে যিনি আমাকে দিয়েছিলেন, তিনি আমাদের বাবুদাদা, তার মেজ বোন আমাদের হছনী বুজি ও আমার ছোট ফুফু। যাঁদের সহায়তায় এই কাদেরী মিঞা বাড়ির পরিবারের অনেক তথ্য উপাত্ত এলোমেলো ভাবে হলেও আমার জানার জন্য অনেকটা সহায়ক হয়েছে বটে। বিশেষ করে এবিষয়ে আামার ছোট ফুফু আসহাদুন নেছা, আমাদের গ্যাদা ভাই, আয়তালী ভাই, নজীর ভাই, ডাঃ আব্দুল জব্বার, ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন, ডাঃ মহিলা বাবু, ডাঃ হারুন অর রশিদ, ঠিকাদার হাকিম উদ্দিন মিঞা, এছাড়া আমাদের পরম হিতৈষী ঝরু ভাই, খোকা ভাই এমন সব অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন যাঁদের কথা, অনেক উপদেশ ও গল্পের ঝুড়ি থেকে সংগৃহীত ইতিবৃত্ত আমার লেখার মূল বিষয়বস্তু। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ভারতবর্ষের নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠা একটি শহর ঃ
ইতিহাসবিদদের মতে বৃহৎ ভারতবর্ষের তিনভাগ জলগর্ভের তলদেশ থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ আজ থেকে ৫০০/৬০০ বৎসর আগে জেগে উঠে। উক্ত জেগে উঠা অংশটি ইতিহাসের পাতায় পাবনা নামে পরিচিতি পায়।
পাবনার নামকরণ ঃ
পাবনার নামকরণ নিয়ে যুক্তিতর্ক বাকবিতন্ডার শেষ নাই। আসলে এখনও পাবনা নামকরণের উৎস সর্বজনস্বীকৃত নয়। তবে অনেকের মতে “পাবনী” থেকে “পাবনা” নামকরণ অনেকটা স্বীকৃত।
সাঁথিয়ার নামকরণ ঃ
সাঁথিয়া প্রসঙ্গে জানা যায়, নদীমাতৃক পাবনার পূর্ব অঞ্চল সাঁথিয়া। এই অঞ্চলে তৎকালিন একটি বিশাল বিল ছিল। এই বিল পরবর্তীতে খন্ডে খন্ডে এক একটি বিশাল চর গড়ে ওঠে। এই চর দীর্ঘদিন বসতিহীন ছিল। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই চরগুলোতে গভীর বনাঞ্চল গড়ে উঠে। এই বনাঞ্চলে গড়ে ওঠে জীবজন্তুর নির্ভরযোগ্য আবাসভ‚মি। জানা যায় ঐসময়ে জীবজন্তর ভয়ে এই খন্ড খন্ড চর অঞ্চলে মানুষ একাকী প্রবেশ করতে বা চলাচল করতে সাহস পেতেন না। তদসময় যারাই এই বনাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতেন তাঁরাই নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বনাঞ্চলে প্রবেশ করতে হোত। জনশ্র“তি পরবর্তীতে তারা ঐ বনাঞ্চল হতে জীবন নিয়ে ফিরতে পারতেন না। জীবনের ঝুঁকি সামলাতে এরপর তারা সদলবলে সঙ্গী সাথী নিয়ে এই বন অঞ্চলে প্রবেশ করতেন। এইভাবে বন অঞ্চলে আসা যাওয়া করতে করতে কোন একসময় এই খন্ড খন্ড চরে ধীরে ধীরে অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে থাকেন। এরাই এখানকার আদিবাসী। তিনি বলেন, এইভাবে বহিরাগত অনেকেই একই কায়দায় এই বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এই বনাঞ্চলের গভীর বনে যেহেতু সাথী ছাড়া যাওয়া যেত না সেহেতু সেই সাথী থেকে সাঁথিয়া নামকরণ করা হয়েছে এটাই আব্বুর দৃঢ় মন্তব্য। তাছাড়া যেভাবেই নামটা এসে থাকুক না কেন আমার বাবার মতে সাঁথিয়া নামটি হৃদয় মাতানো নাম বলে তিনি দাবী করতেন। এইভাবে জেগে ওঠা চরের ওপর যে গ্রামগুলো পাবনার পূর্ব অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল তারই নাম সাঁথিয়া।
শাতবিলার নামকরণ ঃ
বর্তমানে ২৫৮টি গ্রামের গর্বিত সাঁথিয়ার একটি গ্রামে আমার বাপচাচার জন্মভ‚মি। গ্রামটির নাম শাতবিলা। পাবনা শহর থকে সাঁথিয়ার দূরত্ব মাত্র ২৪ মাইল। সাঁথিয়া থেকে দক্ষিণে ১ থেকে দেড় মাইল গেলে শাতটি বিল যে গ্রামকে ঘিরে রয়েছে সেই গ্রামটি আমার বাপ দাাদর পূর্বপুরুষের গ্রাম। ঐ গ্রামটির নাম শাতবিলা। আমার বাবা বলতেন- শাতবিল নামটি যেমন প্রাণবন্ত তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। যার সৌন্দর্য অপরূপ, চমৎকার, আকর্ষণীয় এবং শোভনীয়। এ নামকরণের তত্ত, তথ্য উপাত্ত প্রসঙ্গে তিনি ঠিক কিছুই জানেন না। তবে তিনি অনুমান করে বলতেন এই নামটা তার পূর্বপুরুষের কারো দেয়া হবে। তিনি আরো বলতেন পাবনার ঐতিহ্য যেমন বিশাল ঘুঘুদহ বিল, গাজনার বিল, চলন বিল তেমন শাতবিলার ঐতিহ্য (১) শাতবিলা খাপাল, (২) নয়ন শাহ খাপাল, (৩) কানাগাড়ী, (৪) দক্ষিণ কানা গাড়ী, (৫) টেংরা গাড়ী, (৬) বুধ গাড়ী, (৭) খৈলষা গাড়ী । এই ৭টি বিলের সমন্বয়ে গ্রামটির নামকরণ হয়ে থাকবে শাতবিলা। পাবনার গ্রামকে গ্রাম জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন নামের অনেক বিল। বিল অঞ্চল ও বনাঞ্চল প্রকৃতির দান। এই বিলগুলো দিনে দিনে জলদস্যু, ভূমিদস্যু তথাকথিত দেশপ্রেমিক ক্ষমতাধর পরবিত্তলোভীদের দখলে ভরাট হয়ে হারিয়ে না যায় এই আশঙ্কায় তিনি বলতেন নদ-নদী, বিল-খাল, বন-জঙ্গলে বসবাসকারী জীব-জন্তু সবই মানুষের অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদকে নিজ স্বার্থে হেলায় ধ্বংস না করে এদের সংরক্ষণ করতে শিখলে আল­ার রহমতে এরাই মানুষকে স্বয়ম্ভর করে ভাগ্যবান বানিয়ে দেয়।
পাবনার অন্যতম উপজেলা আজ সাঁথিয়া ঃ
অত্যাচারী ক্ষমতালোভী রাজ রাজাদের দখলে থাকা গ্রামগঞ্জ ছিল অবহেলিত। গ্রামের লোকদের আহার, বাসস্থান, বস্ত্র, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উপকরণ ছিল প্রকৃতি নির্ভরশীল। গ্রামে মড়ক এলে এরা তাদের চালচুলাহীন ঘর দুয়ার ছেড়ে গ্রামে বালা এসেছে বিশ্বাসে মরণের ছবলে ঢলে পড়তেন। এক একটি মড়ক গ্রাম কে গ্রাম মানুষ বসতি উজার করে বিদায় নিত। এটাই ছিল তাদের বদ্ধ ধারণা। দুর্যোগ এলে আল­া বা ভগবানের মানতের কারণে ঘটেছে বিশ্বাসে দূর্ভিক্ষ, মহামারী, বন্যা, ঝড়, তুফানের কবলে মরা লাশ শকুন, কাক, চিল, শৃগাল এরা এদের উদর পূরণ করতো। এই গ্রামগুলি তখন গ্রামশূন্য হয়ে পরায় সেখানে জীবনবাস ছিল নরক সমতুল্য। এমন অসহ্য অন্ধকার পরিবেশের মধ্যে থেকেও হঠাৎ বা দৈবগুনে কয়েক হাজার গ্রামের মধ্যে হতে কালেভদ্রে কোন না কোন ঘরে কোন কোন সময় ক্ষনজন্মা পুরুষের আবির্ভাব ঘটেনি তা নয়। তবে প্রকৃতপক্ষে এটা হওয়া সাধারণতঃ অকল্পনীয় বটে। তদকালিন এমন হাজারো গ্রামের মধ্যে সাঁথিয়াধীন শাতবিলা গ্রমের দ্ইু সহোদর একই মায়ের দু’টিমাত্র সন্তান। যাদের আলোর ছটায় আজ সাঁথিয়া আলোকিত। কারণ বিশ্বের দরবারে একটি জাতির সভ্যতা, মর্যাদা ও উন্নয়নের মাপকাঠি হচ্ছে মানব সম্পদ। তাই যে দেশ বা শহর বা গ্রামের শিক্ষিতের হার ও মান যত উন্নত সে দেশের মানব সম্পদের মানও ততধিক উন্নত। এদিক থেকে সাাঁথিয়া উপজেলা পাবনা জেলার অন্যতম বলা চলে। গ্রামীণ সমাজের গুটিকয়েক সচেতন মানুষ যারা তৎকালীন ইংরেজ তুষ্ট প্রভাবশালী স¤প্রদায়ের সঙ্গে অরিাম বুদ্ধিযুদ্ধে নিজেদের কে শিক্ষাদীক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ও প্রপিতামহগণের অবদান অনস্বীকার্য। সাঁথিয়ার মিঞা পরিবার শিক্ষা বিস্তারের পথকে আঁকড়িয়ে থাকার কারণে আজ সাঁথিয়াবাসী তথা পাবনার পূর্বাঞ্চল শিক্ষা-দীক্ষায়, উন্নয়নে অনন্য উজ্জ্বল করতে সচেতন ও দৃঢ় ছিলেন। কেবলমাত্র সেই গুটিকয়েক পরিবরের মধ্যে আমার পিতা-চাচা ভাই, পিতামহ গৌরবময় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে আজ সাঁথিয়া উপজেলায় আলেম, ওলেমা, শিক্ষক ব্যবসায়ী, বিজ্ঞ আইনজীবী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিজ্ঞ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রমুখ জ্ঞানী-গুণী, বিদ্বান ব্যক্তিগণ দেশে বিদেশে মর্যদার আসনে সমাসীন থেকে দেশ জাতির অভ‚ত কল্যাণ করে সাঁথিয়ার সৌরভ ছড়াচ্ছেন।
ভারতের বৃহত্তর পাবনা সাঁথিয়ার রূপকার আজ বিস্মৃতঃ
পাবনা শহর থেকে ১১-১২ মাইল দূরত্বে আতাইকুলা। এই আতাইকুলা থেকে মাত্র দুই-আড়াই মাইল পথ গেলেই মাধপুর। এই মাধপুর থেকে সাঁথিয়া থানা এবং সাঁথিয়া বাজার এখন সবাই জানে সাঁথিয়া উপজেলা। আতাইকুলা থেকে ০৯-১০ মাইল দুরে সাঁথিয়া থানা। সাঁথিয়াা বাজার থেকে গ্রামটির দূরত্ব বড় জোর এক থেকে দেড় মাইল হবে। পাবনা শহর থেকে গ্রামটির দূরত্ব ২৪ বা ২৫মাইল। সেই সময় পাবনা শহর থেকে আতাইকুলা পর্যন্ত সড়ক পথ মোটামুটি চলনসই ছিল। আতাইকুলা থেকে মাধপুর এবং মাধপুর থেকে সাঁথিয়া, সাঁথিয়া থেকে শাতবিলা পর্যন্ত ১০০/১৫০ বছর আগেও যে রাস্তা দিয়ে মানুষকে চলাফেরা করতে হতো তাকে যাতায়াতের পথ না বলে বলা যেতে পারে কাদামাটি, পঁচাডোবা, খালখন্দক, টিলা, মাঝে মধ্যে সরল আবার কখনও আকাবাঁকা, উঁচু নিচু যা ছিল চলার জন্য অযোগ্য একমাত্র যাতয়াতের পায়ে হাঁটা পথ। যা মেঠেল পথ বা কাদামাটির পায়ে চলা কাঁচা পথ নামে পরিচিত ছিল। লম্বা এই পায়ে চলা কাঁচা পথটি সাঁথিয়া বাজার থেকে ইছামতি নদীর অববাহিকার বাঁধের ওপর দিয়ে ঘুঘুদহ বিলের পূর্বদিক থেকে টানা ২৪ মাইল গিয়ে বর্তমান ঢাকা রোড অবদি চলে গেছে যা এখন পাকা রাস্তা বিশ্বরোড বটে। ঐ রাস্তা দিয়ে ১০০ বছর আগেও ঐসব বাঁধ বা চলার জন্য সহজ কোন পথঘাট ছিল না। এই কাঁচা পথে পায়ে হাঁটা পথটি এমনই অমসৃণ এমনই এবড়ো থেবড়ো, এমনই উঁচু নিচু খাল-খন্দকে পরিণত ছিল যে, প্রাণের তাগিদ ছাড়া গ্রাম্য মানুষের কাছে শহর ছিল স্বর্গরাজ্য। তাই শহরের লোকেদের পরিচয় ছিল শহুরে বাবু। তখন গ্রাম ছিল শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একমাত্র রাজধানী ছাড়া তখন শহরেই বিদ্যুৎ, অট্রলিকা, নামি দামি বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় শহর অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল না। সেই অন্ধকার যুগে গ্রামবাসীদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়া দুঃস্বপ্ন বিলাসিতা মাত্র। তখনকার বিত্তবান পরিবার জমিদার কুলের সন্তানাদিগের পক্ষে ও শিক্ষার উচ্চগন্ডি পার দেয়া অবাস্তব ছিল। ঐসময় বাংলার হাজার ও গ্রামের ন্যায় এই অজ শাতবিলা গ্রাম থেকে আমার আব্বা মরহুম আজহার আলী ও আমার একমাত্র চাচা মরহুম আফছার উদ্দিন আহমেদ এক মায়ের দুই পুত্রই কিভাবে কি মন্ত্রবলে কবে ঐ নামহীন গ্রামের একটি মুন্সিম পরিবার হতে বিএ বিএল পাশ করলেন, পরহিতৈষী জমিদার হলেন, কবে পরোপকারী উকিল/ প্লীডার হয়ে কবে প্রথম কোথায় কোন বারের সদস্য হয়ে নিয়মিত আইন ব্যবসা শুরু করলেন, আবার জনদরদী গরীবের প্রাণপ্রিয় হয়ে জনহিতকর কাজে অমুল্য অবদান রেখে পাবনার রূপকার হলেন এ তথ্য উপাত্ত ইতিবৃত্ত আজ বিস্মৃত প্রায়।
আমার লেখার প্রেরণাকারী পাঠকবৃন্দ ঃ
গত ২২জুন’১৭ ইং তারিখ “অনন্য কথা” মাসিক পত্রিকায় “ ৮০ বৎসর পূর্বে অবিভক্ত ভারতবর্ষের বৃহত্তর পাবনার বিস্মৃত রূপকার” প্রকাশিত হওয়ায় সম্পাদক ও প্রকাশককে অভিনন্দন। এরপর অনেকেই আমার পিতার সম্বন্ধে আরো জানবার আগ্রহ প্রকাশ করেন । তাঁদের আগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই অশীতিপর উর্দ্ধ বৃদ্ধের মৃত্যু ঘন্টালগ্ন মুহূর্তক্ষণে পিতার স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা যা মনের গহীন থেকে সংগ্রহকৃত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আমার বাবা ও তার বংশধরদের জীবন ইতিবৃত্ত আলোকপাত করতে আমার দারুন আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এর জন্য আমি পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। একটি বিষয়ে আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন, কারন আমি সাহিত্যিক বা কবি নই এমন কি কলমের খোঁচায় কিছু কথা বা কাহিনী বেরিয়ে আসবে এমন বিন্দুমাত্র অনুসন্ধানী দৃষ্টি বা যোগ্যতাও আমার নাই। তাহলেই বোঝেন আমার লেখা চালিয়ে যেতে হলে আপনাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাই আমার একমাত্র ভরসা। কারন আমার লেখার মধ্যে ভাষার দূর্বলতা, ভুল ত্র“টি বা ভাবের সংঘাত থাকতে পারে ,যা সবই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এর পরের সংখ্যাগুলোতে পর্যায়ক্রমে থাকছে আমার বাবার বাল্য জীবন, শিক্ষা জীবন, বৈবাহিক জীবন ও বাবার ধর্মভীতি থেকে শুরু করে তিনি প্লীডার হিসাবে, সমাজ সংস্কারক হিসাবে, জমিদার হিসাবে, রাজনীতিজ্ঞ হিসাবে, নীতিবান হিসাবে, পথ প্রদর্শক পিতা হিসাবে সর্বশেষ তার জরা জীবনের কাহিনী ও তাঁর সমস্ত জীবনের অবদান গুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরতে অবশ্যই বেশ সময় লাগবে। তবে কোন অবস্থাতে আমার চেষ্টার কোন ত্র“টি হবে না। আমার সামর্থ্য ও স্বস্তিময় জীবন কামনায় আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আামার দায়িত্ব নির্ভুলভাবে পালন করতে পারি । ঐ অন্ধকার যুগের শাতবিলা গ্রামের মিয়া পরিবারের উর্দ্ধতন পূরুষদের স্নেহে গড়া আমার বাপ-চাচা তাঁদের গ্রামের ২জন কিংবদন্তি। আমার দুঃখ আমি এই পূর্ব পুরুষদের সম্বন্ধে কিছুই জানিনা। তবে, বাবুদাদার কাছ থেকে যতটুকু জেনেছিলাম তাতে ধরে নেয়া যায় মিঞা বংশের প্রথম পুরুষ ইবনে মিঞা মোঃ আমীর উদ্দিন । আমার এই সুন্দর ভুবনে জন্ম হওয়ার অনেক আগেই আমার বাপ-চাচার বংশধরগণ মায় দাদাজান ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। তবে তাদের জীবনালোক্ষ্য মায় কবে তাঁরা ইন্তেকাল করেন তা জানতে চেষ্টা করে বেশ বিফল হয়েছি। তবে আব্বুকে জিজ্ঞাসা করলে বা তার জীবিত অবস্থায় উনাদের সম্বন্ধে জানতে চাইলে অবশ্যই জানতে পারতাম। এটা নি:সন্দেহে আমার অজ্ঞতা । এই না জানার বেদনা আজো বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি যা আমাকে প্রতিনিয়ত দারুন লজ্জা দিয়ে থাকে। তবে সান্ত্বনার বিষয় ১৯৫১ সালে আমার কোষ্টি নামায় পাওয়া গেছে যে, একদল ইসলামী ধর্ম প্রচারক বহু দিন আগে ধর্ম প্রচারের জন্যে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ইবনে মিঞা মোঃ আমীর উদ্দিন অন্যতম।
আগামী সংখ্যায় ক্রমশ: প্রকাশ হবে।
লেখক: প্রবীণ আইনজীবী, পাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *