• Tue. Dec 3rd, 2024

ডাইনি ও চকলেট বাড়ি ( দীপালী ভট্টাচায)

             

মহু-সৃষ্টি-ছষ্টি ওরা তিন বোন আর অংশু সাগর অর্ক ওরা তিন ভাই। ওরা মামাতো পিসাতো ভাইবোন হলে কি হবে, একেবারে হরিহর আত্মা যেন সবাই। কারো বিরুদ্ধে কখনও যদি একটি কথা বলেছো  অমনি সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠবে উপস্থিত সবাই। সে কি যেমন তেমন প্রতিবাদ একেবারে মারমুখো প্রতিবাদ। ওদের দিদির কাছে রোজ একবার করে বলতো ইস্ গল্প শোনার জন্য তাও গপ্প ইচ্ছেমত হলে হবে না। ওদের পছন্দমত হওয়া চাই যাকে বলে ফরমায়েশী গল্প।

ওরা তিন ভাই গল্প বলে­ই খুশি। গল্পের প্লট নিয়ে তেমন কোন ওজর আপত্তি নেই। কিন্তু তিন বোন ওরে বাবারে গল্পের প্লট বলে দেবে- নায়ক-নায়িকার ডায়ালগ বলে দেবেÑগল্পের শুরুটা বলে দেবে আর গল্পের শেষটা বুঝিয়ে দেবে। দিদির কাজগুলো গুছিয়ে ভাষায় রংচং চড়িয়ে কিছু মেদ চর্বি লাগিয়ে গল্পের কংকালটিকে লাবণ্যময়ী রূপবতী গপ্পে পরিণত করা। মাঝে মাঝে দিদিকে হিমসিম খেতে হয় গল্পের থিম্ বুঝে নিতে। আট বছরের মনু- ছয় বছরের সৃষ্টি ছষ্টি আর বার বছরের অংশু।

গ্রীষ্মের বন্ধ তাই সবার পাঠশালাও বন্ধ। বেড়াতে এসেছে দিদির কাছে, দিদি গপ্প বলো। দিদি বল­- আজকের গল্পের মাল-মশলা কি কি দিতে হবে বলো। তারপর তো গপ্প। অংশু বল­- একটা ডাইনী থাকবে, মুহু বল­- একটা পরী থাকবে। সৃষ্টি ছষ্টি বল­- অনেকগুলো আইসক্রিম থাকবে আর সাগর অংশু বল­- অনেকগুলো টফি চকলেট লঞ্জেস আর চুইংগাম থাকা চাই কিন্তু! কী মুশকিল, এসব মশলা দিয়ে গপ্প বানানো সেকি চাট্টিখানি কথা। দিদি বল­- গল্প শুরু করতে পারি তার আগে পাঁচটা পানের খিলি আর বিশুদ্ধ পানি নিয়ে আস। মুহু বল­- আচ্ছা দিদি, তুমি এত পান খাও কেন? দাঁত বিশ্রী দেখাচ্ছে, ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মুখে গন্ধ বেরুচ্ছে, তুমি তো আগে এত পান খেতে না? দিদি বল­- তখন তোমরা সবাই আমার কাছে ছিলে আর পান ছিল দূরে, এখন তোমরা দূরে বলে পান জায়গা করে নিয়েছে নেশা। সব জেনে শুনেওআমি বিষ করেছি পান। প্রাণেরও আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ।

দিদির কথা মুহু বুঝতে পারে। দিদির কথায় মুহুর চোখে জল এলো। সত্যিই তো দিদির একা একা খুব কষ্ট হয়। অংশু বল­- এটাই নিয়ম, পৃথিবীতে সবাই একদিন একা হয়েই আসে আবার একা হয়েই চলে যায়। দিদি বল­- বারে বাঃ! এরা দেখি একেবারে পাকা দার্শনিক। সৃষ্টি-দৃষ্টি-সাগর-অর্ক গাল ফুলিয়ে বল­- পান, পানি আনছি। মা বল­- একটু পরে চা পাঠিয়ে দিচ্ছি তাও বকবক করছে তিনজনে। দিদি ফিক করে হেসে বল­- রাগে মুখ বাঁকালে, চোখ দুটি রাঙালে তবু যেন মনে হয় কত মধু মাখানো। মুহু টং করে বললো- দিদি তুমি গুছিয়ে এতো সুন্দর করে কথাগুলো বলো কীভাবে? সাগর বললো- তা না হলে কি দিদি পল্প বানাতে পারতো  আমাদের জন্য। সাগর বলেছে দশ কথার এক কথা। অর্ক বল­- গল্প-গান-কবিতা-ছড়া আমিও লিখতে জানি।

দিদি বল­- তাহলে শুরু কবি কি বলো! এক দেশে ছিল এক ডাইনী। ও যখন যেমন তখন তেমন রূপ ধরে মানুষের চরম সর্বনাশ করতো পারতো। ওর নেশা ছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট শিশুদের ধরে নিয়ে এনে ওর বড় বাড়িটায় আটকে রাখা, আর কম কম করে খেতে দিতে দিতে শিশুদের শুকিয়ে মারা, আর ক্ষিদের জ্বালায় ওরা যখন চিৎকার করে কান্না জুড়ে তখন ডাইনী হাততালি দিয়ে হাসে আর বলে- তোদের মানুষ জাতিটাকে আমি ভীষণ হিংসা করি। আর সেজন্য তোদের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণায় তোরা যখন চিৎকার করে কাঁদিস তখন আমি মনের আনন্দে চিৎকার করে হাসি। অর্ক বল­- এজন্যই তো লোকে বলে ডাইনী মা’র কোন মায়া মমতা নেই, এরা মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। অংশু বল­- ‘নো কমেন্ট নো কমপ্লেন, নো অপিনিয়ন নো আরগুমেন্ট’ শুধু শুনবে শুনবে আর শুনবে। নো টক নো বকবক। দিদি ষ্ট্যার্ট, ইওর ষ্টোরী।

সেই ডাইনী বাচ্চাদের আশস্ত করার জন্য তৈরী করেছিল এক সুন্দর মনোরম বাড়ি। আর যার দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতের আইসক্রিম-চকলেট-চুইংগাম- বেলুন আর খেলনাপাতি। সুযোগপেলেই বাচ্চারা দৌড়ে ঐ বাড়িটার কাছে মাথা ঢুকালেই চুইংগাম-খেলনাপাতি নিতে চায়, অমনি ডাইনী পরীর বেশ ধরে ওদের কাছে এসে মায়াজাল ছড়িয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে এ বাচ্চাদের চকলেট ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে লোহার দরজাটা বন্ধ করে দেয়। এভাবে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ডাইনী কষ্ট দেয়। একদিন এক বুদ্ধিমান ছেলে দূরে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলো। মনে মনে বুদ্ধি বের করতে লাগলো কীভাবে ডাইনীকে পরাস্ত করা যায়।

সাগর বল­- ডাইনীকে পরাস্ত করা এত সোজা না বুঝলে?

মহু বল­- বুদ্ধি থাকলে, একতা থাকলে, সমঝোতা ও সহানুভূতি থাকলে সবকিছু সম্ভব বুঝলে।

অংশু বল­- গল্প শুরু করার আগেই আমি গল্পের নীতিমালা বলে দিযেছি, ভুলে গেলে চলবে কেন- নো টক্ নো বকবক।

দিদি এই ফাঁকে এক কাপ চা আর পানের খিলিটা মুখে দিয়েছে। অর্ক গাল ফুলিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। বল­- পান খেতে খেতে গপ্প বলো তা আমার পছন্দ না। তোমার কথা অনেকগুলোই বুঝতে পারিনা আমরা।

দিদি পানটা অর্ধেক চিবিয়ে ফেলে দিল। মুখ থেকে নাতি-নাতনীর আবদার, সুদ ছাড়া। ঐ ছেলেটার নাম ছিল বিপ্লব। বিপ্লব একদিন স্কুলের সকল ছেলে মেয়েকে  বল­- চল আজকে আমরা একটা চকলেট বাড়ি দেখে আসি। আমি যেভাবে বলবো তোরা ঠিক সেইভাবেই তা করবি। তোরা পঞ্চাশ জন ঐ চকলেট বাড়িটা একসাথে ধাক্কা দিবি আর বাকীরা আমার সাথে লোহার জালটা ঐ পরী সুন্দরীরদিদি বল­- তারপর যেমন কর্ম তেমন ফল। পলাইতে পথ নাই, যম আছে পিছে, সবাই গরম তেলের কড়াইতে নিয়ে ফেল­ ডাইনীকে। ডাইনী টগবগ করে ফুটতে লাগলো সেখানে আর ছেলে মেয়েরা বল­-

ঃ বোকার মত কারো মিথ্যে মায়ায় ভুলতে নেই তাতে বিপদ বাড়ে।

সবাই বল­- আমরা এবার বিপ্লবকে একটা জোরে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাই কি বল?

 দিদি বল­- তোমরা যা বল তাতেই একমত।

বিশ্বব্যাপী চলছে মরণ ব্যাধি করেনা। এই করোনাকালীন সময়ে আমরা হারিয়েছি অগণিত বুদ্ধিজীবী, আলোকবর্তিকা। এ ছাড়াও প্রায় অনেকেরই স্বজন-প্রিয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চির বিদায় নিয়েছেন। সবার আত্মার শান্তি ও জান্নাতবাস কামনা করে তাঁদের স্বজন-প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

সেই সাথে সকলের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ করোনাকে অবহেলা করবেন না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার ও সাবান, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াস ব্যবহারে সচেতন হোন। নিজে স্স্থু থাকুন, পরিবার প্রিয়জনদের তথা দেশ ও জাতিক সুস্থ রাখুন।

     পবিত্র ঈদুল আযহা আমাদের ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত একটি ধর্মীয় উৎসব। আসুন আমরা স্বজন-প্রিয়জন সহ প্রতিবেশীদের সাথে ঈদের আনন্দটুকু সমানভাগে ভাগ করে নিয়ে করোনাকালীন এই ভয়াবহ সময়ে মানিবতার জয়গান গেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা ও সুস্থ নিরোগ পৃথিবী কামনা করি। আগামী প্রজন্ম যেন সুন্দর ও বাসযোগ্য একটি পৃথিবী উপহার পায় এটাই হোক আমাদের এবারে ঈদে সম্মিলিত প্রার্থনা।

মাসিক অনন্য কথা প্রকাশনায় যারা লেখা পাঠিয়ে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন সকলের প্রতি রইলো আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণ কামনা করি।

                                                -সম্পাদক, অনন্য কথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *