ধর্মান্ধরা সবসময়ই ছিল আছে এবং থাকবে। কিছু মানুষ আছে যারা নিজে ধর্ম পালন করেন না অথচ অপর ধর্মাবলম্বীর সমালোচনা ও নিন্দা করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে এদেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে হাজার বছর ধরে। সাম্প্রদায়িক দ্ব›দ্ব বাঁধিয়ে ইংরেজরা ভারতবর্ষ শোষণ করেছে
১শ’ ৯০ বছর।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাজী নজরুল ইসলামের ছিল গভীর সখ্য। গুরু-শিষ্য সম্পর্ক ছিল দৃঢ়। অথচ সে সময় একটি চক্র ছিল। তাঁদের দু’জনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করতো। যদিও তা সফলতা পায়নি। আমরা ছোট সময় যখন স্কুলে পড়েছি তখনই শুনেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিংসা করতেন কাজী নজরুলকে। এও শুনেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিলের ডিম এবং ধুতরার ফল খাইয়ে নজরুলের মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিয়েছিলেন। এই ডাঁহা মিথ্যা কথাটি পাকিস্তান সরকারও ব্যাপক প্রচার করেছিল তাদের ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী ছাত্র সংগঠন এন এস এফ কর্মীদের মাধ্যমে। আইয়ুব খানের শাসনামলে রবীন্দ্রনাথের রচনা যাতে কেউ না পড়ে এবং তাঁর প্রতি এদেশের বাঙালি মুসলমানদের মনে ঘৃণা জন্মানোর উদ্দেশ্যেই তা করা হয়। এখানে স্বল্প পরিসরে আমি আলোচনা করতে চাই রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কের বিষয়টি। এতেই পাঠকগণ বোধকরি বুঝতে সক্ষম হবেন রহস্যটা কোথায় এবং কেন?
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ৩৮ বছরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয় ১৯১১ সালে এবং তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। অর্থাৎ গীতাঞ্জলি যখন প্রকাশিত হয় তখন কাজী নজরুলের বয়স ১২ বছর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন কাজী নজরুল ইসলামের বয়স প্রায় ১৪ বছর।
নজরুল যেমন রবীন্দ্রনাথকে কবিগুরু বলে সম্মান করতেন রবীন্দ্রনাথও তেমনি তাঁর কবি প্রতিভাকে স্বীকৃতি জানাতে কুন্ঠিত হননি। নজরুলের ‘ধুমকেতুকে’ আশীর্বাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, আয় চলে আয় রে ধুমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/ দুর্দিনের এই দুর্গা শিরে, উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন/ অলক্ষণের তিলক রেখা/ রাতের ভালে হোক না লেখা/ জাগিয়ে দে রে চমক মেরে, আছে যারা অর্ধচেতন। ‘ধুমকেতু’ পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আশীর্বাণীটি প্রকাশিত হতো। নজরুল ইসলাম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘লাঙলে’র প্র”ছদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বচন লেখেন : “ধর, হাল বলরাম, আন তব মরু-ভাঙা হল,/ বল দাও, ফল দাও, স্তব্ধ হোক ব্যর্থ কোলাহল।”
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা করে এসেছি সকল হৃদয়-মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইষ্টদেবতাকে পূজা করে। ছেলেবেলা থেকে তার ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ, ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি। এ নিয়ে কত লোক ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে”।
কথাশিল্পী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায় একদিন নজরুলের এই ভক্তি শ্রদ্ধার কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন নজরুলের উপস্থিতিতেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেসে বলেছিলেন, যাক আমার আর ভয় নেই তাহলে। নজরুল সঙ্কোচে দূরে গিয়ে বসলেও রবীন্দ্রনাথ সস্নেহে তাকে কাছে ডেকে বসিয়েছেন। নজরুল নিজেই লিখেছেন, “তখন আমার মনে হতো আমার পূজা সার্থক হল, আমি বর পেলাম”।
‘অনেকদিন তাঁর কাছে না গেলে নিজে ডেকে পাঠিয়েছেন। কতদিন তাঁর তপোবনে (শান্তি নিকেতন) গিয়ে থাকবার কথা বলেছেন। হতভাগা আমি তাঁর পায়ের তলায় বসে মন্ত্র গ্রহণের অবসর করে উঠতে পারলাম না। বনের মোষ তাড়িয়েই দিন গেল’।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন। নজরুল তখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কারারুদ্ধ। কবি পবিত্র বন্দোপাধ্যায় -এর মাধ্যমে জেলখানায় বইখানি পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি উৎসর্গ পত্রে নজরুলকে ‘কবি’ বলে অভিহিত করে লেখেন, জাতির জীবনের বসন্ত এনেছে নজরুল। তাই আমার সদ্য প্রকাশিত ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যখানি কবি নজরুলকে উৎসর্গ করছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছাকাছি যেসব কবি-সাহিত্যিক থাকতেন তাদের অনেকেই তখন অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন তাঁর প্রতি। এর জবাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়সহ উপস্থিত জনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস তারা নজরুলের কবিতা না পড়েই এই মনোভাব পোষণ করছে। আর পড়ে থাকলেও তার মধ্যে রূপ ও রসের সন্ধান করেননি, অবজ্ঞাভরে চোখ বুলিয়েছে মাত্র। . . . কাব্যে অসির ঝনঝনা থাকতে পারে না, এও তোমাদের আবদার বটে। সমগ্র জাতির অন্তর যখন সে সুরে বাঁধা, অসির ঝনঝনায় যখন সেখানে ঝংকার তোলে, ঐক্যতান সৃষ্টি হয়, তখন কাব্যে তাকে প্রকাশ করবে বৈকি। আমি যদি আজ তরুণ হতাম, তাহলে আমার কলমেও এই সুর বাজত।
দু’খানা ‘বসন্ত’ দিয়ে একখানায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম দস্তখত করে দিয়ে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে বললেন, ‘তাকে (নজরুলকে) বলো, আমি নিজের হাতে তাকে দিতে পারলাম না বলে সে যেন দুঃখ না করে। আমি তাকে সমস্ত অন্তর দিয়ে অকুন্ঠ আশীর্বাদ জানাচ্ছি। আর বলো কবিতা লেখা যেন কোন কারণেই সে বন্ধ না করে। সৈনিক অনেক মিলবে, কিন্তু যুদ্ধে প্রেরণা যোগাবার কবিও তো চাই’।
এ কথা থেকে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুলকে কবি স্বীকৃতি দিতে কত আন্তরিক উদার ও অকুন্ঠ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে তার বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ডাকতেন
‘উদ্দাম’ বলে। নজরুল অনেকবার ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে কবিতা গান ইত্যাদি শুনিয়েছেন এবং তাঁর কাছ থেকে প্রচুর উৎসাহ পেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ চাইতেন না যে নজরুল তাঁর কবি প্রতিভাকে যথার্থ সৃষ্টি কাজে না লাগিয়ে অন্য বিষয়ে নষ্ট করেন। এই জন্য নজরুলকে তিনি একদিন (সঙ্গে ছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর) তরোয়াল দিয়ে দাড়ি চাঁচতে নিষেধ করেছিলেন। এই কথায় নজরুল ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আমার কৈফিয়ত কবিতায় তিনি লেখেন, “গুরু কন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা।” নজরুল পরে বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর তত্তে¡র কথা। নজরুল ইসলাম যৌবনে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। এ ছাড়া গীতাঞ্জলির সবগুলো কবিতা ও গান তাঁর মুখস্ত ছিল। এ কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবহিত হওয়ার পর খুবই খুশী হয়ে বলেছিলেন, আমারই তো মুখস্ত নেই। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, বিদ্রোহী, ভাঙ্গার গান পড়ে রবীন্দ্রনাথ অকুন্ঠ প্রশংসা করেছিলেন নজরুল ইসলামকে।
হুগলী জেলে কারারুদ্ধ নজরুল জেল কর্মকর্তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন। একটানা ৩৯ দিন চলে অনশন। সমগ্র দেশবাসী উদ্বিগ্ন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুরু হয় মিটিং মিছিল।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ১৯২৩ সালের ২১ শে মে কোলকাতার কলেজ স্কোয়ারে বিশাল জনসভা হয়। উদ্বিগ্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নজরুলকে অনশন ভঙ্গ করার জন্য টেলিগ্রাম
পাঠান। টেলিগ্রামটি করা হয়েছিল প্রেসিডেন্সি জেলের ঠিকানায়। তাতে লেখা, “এরাব Give up hunger strike, our literature claims you.. যেহেতু নজরুল তখন হুগলী জেলে তাই ইংরেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবেই ঠিকানা অস্পষ্ট লিখে টেলিগ্রামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠিকানায় ফেরত পাঠান। নজরুল তার বন্ধু কুমিলার বীরেন্দ্রকুমারের মা বিরজাসুন্দরী দেবীর হাতে লেবুর সরবত পান করে অনশন ভঙ্গ করেন।
১৯২৮ সালে নজরুল তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন ‘সঞ্চিতা’ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন।
বিভিন্ন রচনায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানাবিধ উলেখ থাকলেও সম্পূর্ণ তাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো হলো, ‘নতুন চাঁদ’ গ্রন্থের ‘অশ্র“পুষ্পাঞ্জলি’ ও ‘কিশোর রবি’ এবং ‘শেষ সওগাত’ গ্রন্থের ‘রবি জন্মতিথি’।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ৮০তম জন্মদিনে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন ‘অশ্র“ পুষ্পাঞ্জলি’ কবিতা “চরনারবিন্দে লহ অশ্র“ পুষ্পাঞ্জলি/ হে রবীন্দ্র তব দীন ভক্ত এ কবির। অশীতি-বার্ষিকা তব জনম উৎসবে/ আসিয়াছি নিবেদিত নীরব প্রণাম ! হে কবি সম্রাট, ওগো সৃষ্টির বিস্ময়/ হয়তো হইনি আজো করুণা-বঞ্চিত! সঞ্চিত আছে যে আজো স্মৃতির দেউলে/ তব স্নেহ করুণা তোমার, মহাকবি ! … বিশ্ব কাব্যলোকে কবি, তব মহাদান/ কত যে বিপুল, কত যে অপরিমাণ/ বিচার করিতে আমি যাব না তাহার, মৃৎভান্ড মাপিবে কি সাগরের জল।”
কিশোর রবি’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন, “হে চির কিশোর কবি রবীন্দ্র, কোন রসলোক হতে/ আনন্দ বেণু হাতে লয়ে এলে খেলিতে ধূলির পথে?/ কোন্ধসঢ়; সে রাখাল রাজার লক্ষ ধেনু তুমি চুরি করে/ বিলাইয়া দিলে রস-তৃষাতুরা পৃথিবীর ঘরে ঘরে।”
১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ (১৯৪১ এর ৭ আগস্ট) রবীন্দ্রনাথের তিরোধানে খুবই শোকে কাতর হন নজরুল। তিনি রচনা করেন ‘রবিহারা’ ও ‘সালাম অস্তরবি’ কবিতা দু’টি। তাঁর রচিত ‘বিদায়’ নামে গানটি নজরুলের সুরে গান ইলা মিত্র (ঘোষ) ও সুনীল ঘোষ। আকাশবাণী কোলকাতা কেন্দ্র থেকে ‘রবিহারা’ কবিতাটি সে দিন আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে ব্যথিত কবি নজরুল লিখলেন, কবিতা “সালাম অস্ত রবি’ — ‘কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ, ঋষি ও ধ্যানী/ মহাকবি রবি অস্ত গিয়াছে ! বীনা, বেনুকা ও বাণী / নীরব হইল। ধূলির ধরণী জানিনা সে কত দিন/ রস-যমুনার পরশ পাবে না। প্রকৃতি বাণীহীন/ মৌন-বিষাদে কাঁদিবে ভূবনে ভবনে ও বনে একা;/ রেখায় রেখায় রূপ দিবে আর কাহার ছন্দে লেখা ?”
বিদায় গানটি গাওয়া হয় বিশ্বকবির অন্তিম শায়নেÑ“বিদায় রবির করুণিমায় অবিশ্বাসীর ভয়/ বিশ্বাসী! বল্ধসঢ়; আসবে আবার প্রভাত – রবির জয় !/” জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবার সময় তৎকালীন সময়ের নামী-দামি লোকদেরও সমীহ করে যেতে হয়েছে। অতি বাকপটু ব্যক্তিকেও বিশ্বকবির সামনে কথা বলতে ঢোক গিলতে দেখা গেছে। কিন্তু নজরুলের প্রথম ঠাকুর বাড়িতে প্রবেশ ঝড়ের মতো।
বন্ধুরা তাকে বলতেন ওই বাড়িতে তোর দাপাদাপি চলবে না। কিন্তু নজরুল স্বভাব-সুলভ ভঙ্গিতে ঠাকুর বাড়িতে গলা চড়িয়ে গান গেয়ে প্রবেশ করতেন। সেই প্রবেশ শুধু ঠাকুর বাড়ির ভেতরেই নয়, একেবারে কবিগুরুর শয়ন কক্ষে। একদিন নজরুল ঠাকুর বড়িতে প্রবেশ করলেন ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ গানটি গাইতে গাইতে। ঠাকুর ছিলেন তার শয়ন কক্ষে। স্নেহাস্পদ শিষ্যকে কাছে ডাকলেন এবং আবারও বললেন ‘নজরুল তুমি না কি তরোয়াল দিয়ে আজকাল দাড়ি কামাচ্ছ- ক্ষুরই ও কার্যের জন্য প্রশস্ত-একথা পূর্বাচার্য্যগণ বলে গেছেন।’ এ কথার প্রতিক্রিয়ায় নজরুল বলেছিলেন, সে তো গুরু আপনার আশীর্বাদ। ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে নজরুল ইসলামের খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’র প্র”ছদ এঁকে দিয়েছিলেন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামলেখক, রবীন্দ্র-নজরুল গবেষক, পাবনা।