সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা পরিষদে আমি কর্মরত ২০০২ সালের ঘটনা । উপজেলার আশেপাশে প্রায়ই হৈচৈ মারামারি চাঁদাবাজি ইত্যাদি শোনা যায় পাশাপাশি একজনের নামও শোনা যায় সেটা হলো মাখা ! কে এই মাখা ? হঠাৎ দেখা গেলো একদল সন্ত্রাসী বাহিনীর সামনে লাঠি হাতে কালো করে হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে ল্যাংরাতে ল্যাংরাতে আগে আগে যাচ্ছে ওর নামই মাখা ! ওর কতোগুলো বিশেষ গুণ ছিল প্রথমত চটপট কথা বলতো, গায়ে শক্তি না থাকলেও মারামারির আগে আগে থাকতো, আর পড়ে গেলে উঠতে পারতো না কয়েকজন ধরে তুলতো অথবা নিজেই অনেক কষ্ট করে উঠতো । তখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না, কারো দরকার হলে দোকানে পাঁচ টাকা মিনিট কথা বলতো । একদিন দেখি একটা মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে বেশ ভীর । কৌতুহল ভরে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ভাই ? উনি বললেন, মাখা এমপি সাহেবের সাথে মোবাইলে কথা বলছে। একটু অবাক হলাম ! শোনার চেষ্টা করলাম কি বলে ? তাতে মাখা মাননীয় এমপি মহোদয়কে বলছে, কাকা আমাকে চিনলেন না ? আরে আমি সে-ই মাখা যে মোহাম্মদ নাসিম নেতার গাড়িতে বোম মারছিল ! আশেপাশের লোকজন ওর কথা শুনে হাসাহাসি করছে, আমিও একটু হেসে ওখান থেকে চলে এলাম ! কিছুদিন যেতে না যেতেই আরম্ভ হলো অপারেশন ক্লিনহার্ট অর্থাৎ সেনাবাহিনীর অভিযান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে । কিছুদিন মাখার দেখা নেই ! হায়-রে মাখা কোথায় আছে ? কেমন আছে ? জানি না ! এর মধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে, একদিন মেসের বাজার করতে গিয়ে দেখি মাখা মুখে গামছা পেঁচিয়ে বিল থেকে কলমি শাক তুলে এনে বাজারে বিক্রি করছে ! অনেক ভালো একটা পেশা অন্তত পক্ষে ও-যা করতো তারচেয়ে হাজার গুণ উত্তম, এগিয়ে গিয়ে কিছু শাক কিনলাম ! আমাকে দেখে বললো, স্যার ! ভালো হয়ে গেছি, আর কখনো ঐ রাস্তায় যাবো না ! শুনে ভালো লাগলো ! এরমধ্যে লক্ষ্য করলাম অনেক মাস্তান বড় বড় চুল কেটে ভদ্র পোষাকে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসছে। বেশ একটা নিরাপদ পরিবেশ পরিস্থিতি ঠান্ডা । কেটে গেছে আরও কিছু দিন অপারেশন ক্লিনহার্ট উঠে গেছে । দেখলাম মাখা আবার ওর আগের পেশায় ফিরে এসেছে ! বুঝলাম মাখারা খুব কমই ভালো হয় ! বর্ষার পানি নেমে গেলে শেয়ালগুলো যেমন হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া করে ডাকাডাকি আরম্ভ করে, ঠিক তেমনি কোনো অপরাধী পার পেয়ে গেলে সে তার পূর্বের পেশায় ফিরে যাবে এটাই স্বাভাবিক ।